ই-কমার্স ব্যবসা সফল করার কিছু টিপস

 ই-কমার্স ব্যবসা সফল করার কিছু টিপস

IMAGE SOURCE:WinERP

তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে  বাংলাদেশে ব্যবসার ধরণ গত কয়েক বছরে অনেকটাই বদলে গেছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। সে কারণে ই-কমার্স ব্যবসা এখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে অনেকের ব্যবসাই বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের কারণে সফল হয়না। যেহেতু আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় ও পরিশ্রম এ ব্যবসায় ব্যয় করেন, সুতরাং কোন টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার ব্যবসাও পুরোপুরি সফল হতে পারে সেগুলো আপনাদের অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন।তাই আপনাদের গাইডলাইন হিসেবে ই-কমার্স ব্যবসা সফল করার জন্য রইলো কিছু টিপস – 

Image Source:Orbit Clipping path

১।পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আপোষ করবেননা 

ধরুন আপনি আপনার ওয়েবসাইটের প্রসার বাড়ানোর জন্য নামমাত্র মূল্যে কিছু নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা শুরু করলেন। এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের প্রসার তো হবেইনা বরং যারা সে নিম্নমানের পণ্যগুলো কিনবেন তারা দ্বিতীয়বার আপনার ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনবেননা। সুতরাং আপনার পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সবসময় সচেতন থাকতে হবে এবং কিছুতেই এ ব্যাপারটিতে আপোষ করা যাবেনা।কেননা ক্রেতা ভালো মানের পণ্য বেশি দাম দিয়ে হলেও কিনতে পিছপা হয়না। একইসাথে পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সচেতন হোন। পণ্যের মূল্য খুব বেশি রাখবেননা আবার খুব কম ও রাখবেননা। 

২।ইউজার-ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট মেইনটেইন করুন 

আপনি যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করবেন, সেটি যেন ইউজার ফ্রেন্ডলি হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কেননা যেসব ওয়েবসাইট লোড হতে অনেক সময় নেয়, মোবাইল থেকে সহজে লোড হতে চায়না, পণ্য অর্ডারের প্রক্রিয়াটি জটিল সেসব ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চাননা। তাই আপনার ওয়েবসাইটটি ইউজার ফ্রেন্ডলি রাখুন৷ এমনভাবে ওয়েবসাইট ডিজাইন করুন যেনো সেটি যেকোনো ডিভাইস থেকেই খুব দ্রুত লোড হয় এবং এক পেইজ থেকে অন্য পেইজে খুব সহজে যাওয়া যায়। এতে  দেখবেন ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। 

Image Source:Freepic

৩।ওয়েবসাইটের পণ্যগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজান 

যদি আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য একসাথে পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ক্যাটাগরি অনুযায়ী পণ্য একেকটা ওয়েবপেইজে রাখুন৷ যেমন: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য গ্রোসারি আইটেম ক্যাটাগরি রাখুন যেখানে ক্রেতারা চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি পণ্য একসাথে পেয়ে যাবেন। এর পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইটে যে পণ্যগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সেগুলো একটি আলাদা ওয়েবপেইজে রাখুন এতে করে ক্রেতারা সহজেই দেখতে পারবে এবং চাইলে কিনতেও পারবে।

৪।ই-পেমেন্ট এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি দুটোর ই ব্যবস্থা রাখুন 

বর্তমানে বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ, রকেট ইত্যাদির মাধ্যমে পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকে। বহু ক্রেতা ই-পেমেন্ট ই বেশি পছন্দ করেন। তবে এক্ষেত্রে  অনেক ক্রেতার ভুল ধারণা থাকে  যে অনলাইনে কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা করলে হয়তো তাদের কার্ড থেকে বাড়তি টাকা কেটে রাখা হবে। আপনি ক্রেতার কার্ড থেকে কেনাকাটা করার পর যে বাড়তি  টাকা কেটে রাখা হবে না, এই মেসেজটি ক্রেতাকে দিতে পারেন তাকে আশ্বস্ত করার জন্য।  পাশাপাশি, আপনার ক্রেতাকে এটিও জানান যে আপনার ওয়েবসাইটে ই-পেমেন্ট করলে সেটি সম্পূর্ণ নিরাপদ৷  তাহলে আপনার ক্রেতা নিশ্চিন্ত হয়ে কেনাকাটা করতে পারবেন  । এই মেসেজগুলোর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে  কেনাকাটার হার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

Image Source:the financial Express

আবার অনেক ক্রেতা আছেন যারা পণ্য হাতে পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করতে পছন্দ করেন।সবাই যেন আপনার ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করতে পারে এজন্যে পেমেন্ট মেথোডে ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং ই-পেমেন্ট দুটোর ই ব্যবস্থা রাখুন। 

৫।ওয়েবসাইটের মার্কেটিং এ কৌশলী হোন 

 বর্তমানে  ই-কমার্স ব্যবসাকে জনপ্রিয় করার জন্য সব থেকে বড় হাতিয়ার হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্য নেয়া  । ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে  মার্কেটিং করলে আপনার ওয়েবসাইটে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া সম্ভব।কিন্তু অনেকেই ঠিকমতো জানেননা কিভাবে ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে মার্কেটিং করতে হয়। সঠিকভাবে ওয়েবসাইটের মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে আপনার টার্গেট করা ক্রেতা,তাদের পছন্দ অপছন্দ, কেনাকাটার ধরন, সময় এবং ইচ্ছার ওপর রিসার্চ  করতে হবে। মনে রাখবেন,শুধু টাকাপয়সা খরচ করলেই মার্কেটিং করা যায়না, এখানে সঠিকভাবে রিসার্চের গুরুত্ব অনেক বেশি।   

Image Source:Kindpng

৬।ক্রেতার সাথে যোগাযোগ মেইনটেইন করুন 

 ক্রেতা কোনো কিছু অর্ডার করার পর সেটি ক্রেতার সাথে ফোনকলের মাধ্যমে কনফার্ম করুন৷ তাহলে আপনার ক্রেতার কাছে আপনাকে নির্ভরযোগ্যতা বেড়ে যাবে । পাশাপাশি যদি কোনো কারণ  অর্ডার ডেলিভারি দিতে দেরি হয়, তাহলে দ্রুত ক্রেতাকে এটি জানিয়ে দিতে হবে। এতে করে আপনার ক্রেতা আপনার ওপর বিরক্ত হয়ে অর্ডার ক্যান্সেল করতে চাইবেনা।  অপেক্ষা করে বিরক্ত হবে না।এভাবে প্রতিটি ক্রেতার সাথে  যোগাযোগ মেইনটেইন করার  ফলে আপনার প্রতি ক্রেতাদের নির্ভরযোগ্যতা  বৃদ্ধি পাবে।

৭।ওয়েবসাইটে কেনাকাটার শর্তাবলী ও নীতিমালা রাখতে ভুলবেননা 

 বর্তমানে যারা ই-কমার্স ব্যবসা করছেন, তারা অনেকেই তাদের ওয়েবসাইট থেকে  কেনাকাটা করার শর্তাবলী ও নীতিমালা ওয়েবসাইটে রাখতে ভুলে যান।কেনাকাটা সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাপার যেমন আপনার পণ্যের বৈধতা কতটুকু, রিটার্ন বা এক্সচেঞ্জ পলিসি আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়  যদি ওয়েবসাইটে রাখেন,তাহলে ক্রেতা অর্ডার করার আগে এগুলো পড়ে তারপর অর্ডার করতে পারবেন।এতে পরে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবেনা। 

যারা নতুন তাদের জন্য বলছি, বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসায় অনেকে আগ্রহী থাকার কারণে এখানে প্রতিযোগিতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাই ব্যবসা শুরুর আগে ভালোমতো রিসার্চ করুন, অন্যান্য ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো দেখুন৷ বুঝেশুনে তারপর ওপরের টিপসগুলো মাথায় রেখে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।মনে রাখবেন, পরিশ্রম করলে আপনার ব্যবসাও সফল হবেই! 

 লিখেছেনঃসুমাইয়া রহমান 

RedLive

Related post