ভবিষ্যতে ব্যবসায়; ই-কমার্স ও এফ-কমার্স এর উত্থান।

 ভবিষ্যতে ব্যবসায়; ই-কমার্স ও এফ-কমার্স এর উত্থান।

ই-কমার্স এই বিষয়ে অবগত নন এমন খুব কমই আছেন। বেশ কিছুদিন ধরে সারা বিশ্বে ব্যবসা এর ছবি হিসেবে প্রচলিত রয়েছে ই-কমার্স এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এছাড়াও রয়েছে এফ-কমার্স এর ঊর্ধ্বগতি। সময়ে দেশে এই সব এর প্রবণতা আরো গতি লাভ করছে, মূলত করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাজার স্থির হয়ে পড়েছে। বর্তমান দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায় এমনটা দীর্ঘ সময়ের জন্যই থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের দেশে ই-কমার্সে ও এফ-কমার্সের ভবিষ্যৎ কি রকম ও ব্যবসায় কোনমুখী হচ্ছে?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স এর ভুল প্রয়োগ, জালিয়াতি, অর্থ আত্বসাত এর মূল হাতিয়ার হিসেবেও ব্যাবহৃত হচ্ছে। ই- অরেঞ্জ এর গ্রাহকদের অর্থ আত্বসাত, ই-ভ্যালি এর সময় মত গ্রাহকদের পন্য ডেলিভারি দিতে না পারা ও সম্পদ থেকে বেশি হওয়া এসব কিছুই অনলাইনে ক্রেতা দের আরো সতর্ক করছে ভবিষ্যৎ অনলাইন কেনাকাটা নিয়ে। কিন্তু একই সাথে এফ -কমার্স দেখাচ্ছে আশার আলো।

এফ-কমার্স বলতে ফেসবুক পেইজ ও আইডি ব্যবহার করে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা বোঝায়। যদিও আমরা ইতিমধ্যেই ই -কমার্স ব্যবসার সাথে পরিচিত যা অনলাইনে পণ্য বা সেবা কেনা -বেচার ইঙ্গিত দেয়। ইন্টারনেট শুরু হওয়ার পর থেকে ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স সময়ের সাথে সাথে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই কোভিড সময়কালে, ক্রয় -বিক্রয়ের বৃদ্ধি এক প্রকার নাটকীয়। এফ-কমার্স হল সর্বশেষ ধরনের ই-কমার্স যা তরুণ উদ্যোক্তা এবং গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয়। কোভিড মহামারীর ফলে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসায় নিয়ে এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যদিও এটি উদ্যোক্তাদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রির সুযোগ হয়ে উঠেছে। মানুষ ই-কমার্স সম্পর্কে আগে থেকেই জানত।

এদিকে, ফেসবুক হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশে ২০২০ সালে ফেসবুকের গ্রাহক ছিল ৩৯ মিলিয়ন। অতএব এটি একটি বিশাল অঙ্গন যা উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা বিস্তারের জন্য নিয়েছে।

যেহেতু বেশিরভাগ গ্রাহক বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং এফ-কমার্সের সাথে পরিচিত তাই সাড়া বেশি ছিল। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্ম এই প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে।

অনেকেই এখন নিজের দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে ফেসবুকে পেইজ কিংবা গ্রুপ খুলে ব্যাবসায় পরিচালনা করছেন। ফেসবুকেই এখন বিভিন্ন দোকানীরা নিজেদের পেইজ খুলে পন্য বিক্রি করছেন। এছাড়াও ঘরে বানানো খাবার হতে শুরু করে,হাতে তৈরি জিনিস, শাড়ী ও অন্যান্য করোনা মহামারীর পর থেকে স্থান করে নিয়েছে ফেসবুকে। উই গ্রুপের মাধ্যমে হাজারো নারী পুরুষ উদ্যোক্তা অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেই নিজেদের ব্যবসায় পেইজ খুলে ব্যাবসায় করছেন ফেসবুকে। ব্যক্তিক ছাড়াও বিভিন্ন দোকান এখন নিজেদের ফেসবুক পেইজে খুলেও বিক্রি করছেন। প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত না হওয়ায় এসব ক্ষেত্রে মানুষ সতর্ক থাকতে হয়। উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এই প্ল্যাটফর্মের অসুবিধাও রয়েছে। কিছু প্রতারক ব্যক্তি বিক্রেতা হিসেবে টাকা গ্রহণ করে কিন্তু পণ্যটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয় না। আরেকটি গ্রুপ তাদের গ্রাহকের কাছে সস্তা বা ত্রুটিপূর্ণ পণ্য সরবরাহ করে।

আমাদের ই-কমার্স এর ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছে রকমারী.কম, ফুডপান্ডা, দারাজ, চালডাল.কম, বিক্রয়. কম এর মত সাইট গুলো। সফলতার সাথে ই-কমার্স পরিচালনা করছে দারাজ।

ডেইলি স্টার এ এক সাক্ষাৎকারে দারাজ এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক বলেন, “বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সমৃদ্ধ ই-কমার্স সেক্টর এবং এর মধ্যে জনগণের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে একটি খুব সম্ভাব্য ফলাফল দেখেছে। মানুষ অনলাইন শপিং এবং ডিজিটাল লেনদেনের দক্ষতা যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছে, যা কেবল আমাদের খেলার মাঠের সীমানা প্রসারিত করে। এবং আমরা অনেক বেশি এমন একটি ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা আশা করি ই-কমার্স শিল্প পরিপক্কতার পর্যায়ে চলে যাবে। সমগ্র ইকোসিস্টেম সামগ্রিক শিল্পকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় স্তরে পৌঁছাবে। গ্রাহকের সন্তুষ্টির সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার জন্য প্রকৃতপক্ষে, আমরা এটিকে একটি অলিখিত নিয়ম হিসাবে গ্রহণ করি, গ্রাহকের সন্তুষ্টির সাথে সেবার মানই বাজারে চূড়ান্ত নির্ধারক হওয়া উচিত। আমরা এখানে এসেছি অনেক বড় এবং অনেক ভালো ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য যা আমাদের গ্রাহকদের সুখকে কেন্দ্র করেই। এতদূর যাত্রা সহজ ছিল না, তবুও আমরা যখন সঠিক ছিলাম তখন আমরা অনেক কষ্ট এবং সমালোচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের পথ সুগম করেছি। অগ্রগামীর জন্য এটি কখনই সহজ নয়, সম্ভবত এ কারণেই তাদের ‘অগ্রদূত’ বলা হয়। পরিসংখ্যানগতভাবে, আমরা ইতিমধ্যেই দেশের ১ নং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হতে পারি, কিন্তু সামনে কী আছে তা বিবেচনা করে, আমরা বলব যে আমরা অনেক বেশি উৎকর্ষতা এবং দক্ষতার প্রদর্শন করছি। দারাজ বাংলাদেশের ই-কমার্স শিল্পের মূল ভিত্তিতে তার দায়িত্বশীল এবং গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যবসায়িক লক্ষ্যে অবদান রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে, যাতে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সর্বাধিক সংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যায়।”

বর্তমান সময়ে মানুষ অফলাইন কেনাকাটা থেকে অনলাইনে চলে যাচ্ছে, ডেলিভারি সিস্টেমও উন্নত হচ্ছে। তারা স্মার্ট এবং আরো স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে। এজন্য মানুষকে এখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি আকার এবং মূল্যে বড় হওয়ার সাথে সাথে এটি আরও ভাল হবে। 

বাংলাদেশের ই-কমার্স শিল্প একটি উদীয়মান শিল্প। এই খাতটি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতামূলকতা অর্জন করছে। স্থানীয় ই-কমার্স কোম্পানিগুলি যারা ই-কমার্স শিল্পের শুরু থেকে বাজারে রয়েছে তাদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। ই-কমার্স সাইটগুলি দ্বারা প্রদত্ত পেমেন্ট পদ্ধতিগুলি আরও নিরাপদ করা প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে কম খরচে, উচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করা প্রয়োজন।


ই-কমার্স শিল্পকে ডেলিভারি লজিস্টিকস এবং কাস্টমার সার্ভিসের উপর বেশি জোর দেওয়া দরকার। ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন কারণ ভোক্তাদের ঠকানো এবং নিম্নমানের বা তারিখ-মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ উপস্থিত নেই।

তবে বাধা সত্ত্বেও, এই খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরে দেশের জিডিপিতে ই-কমার্সের অবদান উল্লেখযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই খাতকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সরকারের আরও এগিয়ে আসা উচিত।

লিখেছেন: মোঃ আরাফাত রহমান

Brinty Saha

Related post