জেফ বেজোসঃ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির গল্প

 জেফ বেজোসঃ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির গল্প

অ্যামাজনের মুখ্য নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা  জেফরি প্রিস্টন বেজোস বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার নাম হয়তো আমরা অনেকেই শুনেছি। জেফ বেজোসকে ই-কমার্স এর পথকৃত বলা হয়। কিন্তু জেফ বেজোসের ধনকুবের হয়ে ওঠার গল্পটা হয়তো সবাই জানিনা। কেমন ছিল শুন্য থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠার সফর? বলা হয়ে থাকে সিংহাসনের পথ অতটা মসৃণ হয় না। জেফ বেজোসের বেলায়ও ঠিক তাই। ব্যক্তিগত জীবনের চড়াই উৎরাই তো ছিলই সাথে ছিল কর্মজীবনে সফল হয়ে ওঠার পথে একের পর এক বাধা। সেইসব বাধাকে অতিক্রম করে কিভাবে একজন সাধারণ উদ্যোক্তা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন জেফ বেজোস, সেই গল্পই বলবো আজ আপনাদের বলবো।

ব্যক্তিজীবন

জেফ বেজোস ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি আমেরিকার নিউ মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেন। জেফের জন্মের সময় তার বাবা মায়ের বয়স কুড়িও পেড়োয়নি। তার বয়স যখন চার বছর তখন বাবা মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর জেফের মা মাইক বেজোস নামক একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। মাইক জেফকে দত্তক নেন এবং নিজের পদবি অনুসারে জেফের নামকরণ করেন, জেফরি প্রিস্টন বেজোস। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ম্যাগাজিন ওয়ার্ড এর কাছে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সৎ বাবার নামের পদবি ব্যবহার নিয়ে জেফকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাস্তবিক অর্থে আমি যতদূর জানি, তিনি কেবল জন্মসূত্রে আমার বাবা। ডাক্তারের ফর্ম পূরণের সময় বাবার নাম লিখতে গেলেই কেবল তার নাম আমার মনে পড়ে।

হাস্যোজ্জল ছোট্ট জেফ বেজোসে

ছোটবেলা থেকেই জেফের আগ্রহ দেখা যায় ছোটবেলা থেকেই মেকানিক্সের প্রতি। তিন বছর বয়েসেই তিনি স্ক্র-ড্রাইভার দিয়ে তার খেলনা খুলে ফেলতে শিখেছিলেন। ছোটবেলায়ই বেজোস একটি ইলেকট্রিক এলার্ম তৈরি করেছিলেন যেন ছোট ভাইবোনেরা তার কক্ষে প্রবেশ করতে না পারে। তিনি নিজের ঘরকে একটা ছোটখাটো ল্যাবে পরিণত করে ফেলেছিলেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার আগের গল্প

১৯৮৬ সালে বেজোস প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। এ সময় তার কাছে ইন্টেল, এন্ডারসন কন্সালটিং এর মতো বড় বড় কোম্পানির জব অফার ছিল। তিনি D. E. Shaw & Co. কম্পানিতে তিনি চাকরি করেছিলেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রমোশন পেয়েছিলেন। 

একজন সফল উদ্যোক্তার উদ্যোগী হওয়ার গল্প

জেফ তার দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতে এমন একটি সময় আসছে যখন বাহ্যিক দোকানগুলোর জনপ্রিয়তা কমে যাবে, কেনাকাটা সব অনলাইন ভিত্তিক হয়ে দাঁড়াবে। জেফ তার গ্রাজুয়েশন স্পীচে বলেছিলেন, এমন এক সময় আসবে যখন পৃথিবীর মানুষ মহাকাশে বসতি স্থাপন করবে। বেজোসের বয়স যখন ৩০, তখন ১৯৯৪ সালে একটি পরিসংখ্যানে তিনি দেখেন বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। তখন তিনি ই-কমার্স এর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ দেখতে পান। এই ভাবনা থেকেই ই-কমার্স এর ধারণা উঁকি দেয় জেফের মনে।

যেভাবে অ্যামাজনএর যাত্রা শুরু হয়  

জেফের ধনী হওয়ার পেছনে অ্যামাজন এর ভুমিকাই সবচেয়ে বেশি। প্রথমে অ্যামাজন ছিল পুরানো বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান। তিনি লিস্ট করেন অনলাইনে বিক্রির উপযোগী কিছু পণ্যের যেমন- সিডি, হার্ডওয়্যার, বই সফটওয়্যার সহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসের। এর মধ্যে থেকে তিনি বইকে বেছে নেন।

জেফ বেজোস ও তাঁর স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কোট

 অবশেষে ১৯৯৫ সালে অ্যামাজনের যাত্রা শুরু হয় একটি বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান হিসেবে। শুরুতে অ্যামাজনের নাম ছিল ‘কাডাবরা’ পরবর্তীতে জেফ তার লয়ারের পরামর্শে এই নামটি পরিবর্তন করে অ্যামাজন নামকরণ করেন। এর কারণ হচ্ছে অ্যামাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী এবং জেফ বেজোস চাচ্ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বুকস্টোর প্রতিষ্ঠা করতে।

জেফ ও তাঁর মা জ্যাকলিন বেজোস এবং সৎ বাবা মাইক বেজোস

এছাড়া Amazon ইংরেজি বর্ণমালার a দিয়ে শুরু হয় এবং z দিয়ে শেষ হয়। অর্থাৎ অ্যামাজনে এ টু জেড সবই পাওয়া যাবে এই লক্ষ্য নিয়েই শুরু করেছিলেন জেফ বেজোস। অ্যামাজন পণ্য বিক্রির জন্য ফ্রি শিপিং সুবিধা দিয়েছে। হু হু করে বাড়তে থাকে অ্যামাজনের ব্যবসা। জেফের ব্যবসার কৌশল ছিল অন্যদের চেয়ে ভিন্ন এবং কার্যকরী। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে অ্যামাজন পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হলো, এবং অর্থ উঠলো ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে আখ্যা দিলো ‘কিং অব সাইবার-কমার্স’ আর মনোনীত করলো পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়স্ক ‘পিপল অব দি ইয়ারের’ একজন হিসেবে। মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই জেফ বেজোস একজন বিলিয়নার হয়েছেন।

এগিয়ে যাচ্ছে অ্যামাজন

পুরানো বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল অ্যামাজন, এখন এই প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর প্রথম ‘ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি’ হতে যাচ্ছে। অ্যামাজনে পাওয়া যায় না এমন পণ্যের নাম বলা দুষ্কর। দৈনন্দিন ব্যাবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে পোষা প্রাণীর খাবার, ফার্নিচার পর্যন্ত সবই পাওয়া যায়। এমনকি অ্যামাজনের নিজস্ব ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসও রয়েছে।

অ্যামাজনের এগিয়ে যাওয়ার যত ‘ইউটার্ন’

মাত্র ২১ জন কর্মচারী নিয়ে অ্যামাজনের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। বর্তমানে অ্যামাজনে চাকরি করেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার লোক যা ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গের জনসংখ্যার প্রায় সমান।

শুন্য থেকে শিখরে

জেফ বেজোস একজন সাধারণ উদ্যোক্তা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। কেননা তিনি কখনোই কোনো গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকেন নি, বরং সাহসিকতার সাথে নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন অ্যামাজন দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। শুধু মাত্র বই দিয়ে যে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সেখানে আস্তে আস্তে নতুন পণ্য যোগ হতে থাকলো। সেই সাথে অ্যামাজনের জনপ্রিয়তাও বাড়তে লাগলো।

যত্নে যত্নে গড়ে উঠা সফলতার গল্পের নাম অ্যামাজন

বর্তমানে জেফ বেজোস ১ মিনিটে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তা একজন এভারেজ এমেরিকান এর সারা বছরের আয়ের সমান। তিনি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২৪০০ ডলারেরও বেশি ইনকাম করে থাকেন। জেফ অ্যামাজনের ছাড়াও বিশ্বের নামীদামী ১৫টি কোম্পানির মালিক। জেফ বেজোস গুগলের একজন বিনিয়োগকারী! জেফ বেজোসের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ১০৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

লিখেছেনঃ মালিহা মাহমুদ

RedLive

Related post