বর্তমান সময়ে যেভাবে কৃষির টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব

 বর্তমান সময়ে যেভাবে কৃষির টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব


দীর্ঘ দেড় বছরের করোনা পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দেশের শ্রমিক,চালক,দোকান -কর্মচারি সবমিলে অনানুষ্ঠানিক খাতে প্রায় ৪ কোটি মানুষ কাজ করে যাঁদের কর্মসংস্থান বর্তমানে নেই। আর কর্মসংস্থান না থাকলে অন্নসংস্থান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্তমানে করোনার প্রকোপ কমে গেলেও, করোনা পরবর্তী প্রভাব হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে,করোনা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জনবহুল দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবচেয়ে অবদান রাখতে পারে কৃষি। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কর্মসংস্থান ও জীবিকার জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা কৃষিখাতে ফিরতে পারেন। স্বস্তির বিষয় এই যে,বাংলাদেশ কৃষি প্রদান দেশ হিসেবে দীর্ঘকালের সুখ্যাতি রয়েছে। সুজলা-সুফলা মাটিতে বরাবর কৃষি উৎপাদন ভালো হয়।  করোনা পরিস্থিতিতেও পূর্বের মতো দেশে ধান উৎপাদন হয়েছিল।

বর্তমানে কৃষির সুরক্ষায় করণীয়সমূহ :

° দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। কারণ, বর্তমানে করোনা পরবর্তী এই সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় উন্নত দেশ থেকে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। ফলে দেশীয় সীমিত সম্পদের ব্যবহার করে কিভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জিত হয় সেদিকে দৃষ্টিপাত রাখতে হবে। কৃষি, প্রাণিজ ও মৎস্য সম্পদ বিভাগের সমন্বিত পরিকল্পনায় দেশের কৃষিখাত ফিরে পেতে পারে তার হারানো গৌরব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রনালয়, কৃষি বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটসমূহ কে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। 

° বাংলাদেশর কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধতাগুলো চিহ্নিত করে দূরীকরণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশের মাটি উর্বর হওয়া সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদনে প্রতিকূল পরিবেশ অন্যতম বাঁধা। প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো হচ্ছে খরা,লবণাক্ততা,বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। 

°খরা অবস্থায় ফসল উৎপাদন কৌশল :

 ★উপযুক্ত ফসল বা ফসলের জাত ব্যবহার

★অগভীর চাষ

★জাবড়া প্রয়োগ

★সারির দিক পরিবর্তন 

★পানি ধরা

°লবনাক্ত অঞ্চলে ফসল উৎপাদন কৌশল  :

★লবনাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের চাষ

★সেচ ও নিষ্কাশনের হ্রাসকরণ

★সঠিকভাবে জমি তৈরি

★বপন পদ্ধতির পরিবর্তন

°বন্যাপ্রবণ অঞ্চল ফসল উৎপাদন কৌশল :

★ বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের উপযোগী ধান চাষ করতে হবে। বর্তমানে বন্যার শেষে ধান চাষের জন্য ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট  কিরণ,দিশারি, ধান ৫১, বি-ধান ৫২ নামের উদ্ভাবন করেছে যা কৃষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বোরো ধান চাষে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

°সেচ সুবিধা সুনিশ্চিত করতে হবে। বৃষ্টিনির্ভর আমন মৌসুমে সাধারণত চাষিদের সেচ দেওয়ার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি থাকে না। ফলে নীরব খরায় ধানের ফলন হ্রাস পাচ্ছে। প্রয়োজনে সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করে সবাইকে সেচ সুবিধার আওতায় আনতে হবে। বিডিএস সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে হবে। গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপনে সরকারি ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

° বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনে ভর্তুকিসহ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের সহজ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

°খাদ্য ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পতিত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের উপর জোর গুরুত্বারোপ করতে হবে। বরিশাল, সিলেট বা পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাবাদি জমিগুলোকে চাষের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক ফসলি জমি সম্ভব হলে সেচ সুবিধার আওতায় এনে দুই বা তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করতে হবে।


°কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। পাইকারি বাজার সৃষ্টি, গ্রোয়ার্স মার্কেট, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ইত্যাদি ভূমিকা পালন করতে হবে।

°বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের। ই-কর্মাসের যথাযথ ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যেখানে একজন ভোক্তা সহজে পণ্য কিনতে পারবেন। 

°বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির ধরন বিবেচনা করে কোন ফসল প্রয়োগ করতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হবে। এভাবে সার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

°বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃষি শিক্ষার মান আরও উন্নত করত হবে। বায়োটেকনোলজি বা জীবকৌশল বিজ্ঞানে অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে।

°কৃষিক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস করতে হবে। চাষিদের সহজ শর্তে ঋন প্রদান করতে হবে। 

°এই মূহুর্তে যারা বাড়িতে আছে বা যেখানেই আছে বসতবাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গায় বা ছাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজি,ফলমূল চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

বর্তমানে করোনা পরবর্তী এই সময়ে দেশের জনমানুষের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ,জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষিই একমাত্র অবলম্বন হতে পারে। তাই সঠিক পন্থা অবলম্বন করলে কৃষির টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

 লিখেছেন : বৃন্তি সাহা

Brinty Saha

Related post