আপনি কী দাবা খেলতে পারেন!

 আপনি কী দাবা খেলতে পারেন!

আপনি হয়ত হ্যাঁ বলবেন।কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কী জাপানিজ দাবা খেলতে পারেন? তখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে দাবা ও জাপানিজ দাবা এক নাকি ভিন্ন কোনো নিয়মের খেলা। হ্যঁ!!জাপানিজ দাবা সাধারণ দাবার থেকে অনেকটাই ভিন্ন।এর আলাদা নাম ও রেয়েছে –”শোগি”। শোগি হলো একটি কৌশলী বোর্ড খেলা যেটা প্রচলিত দাবার থেকে একটি ভিন্নধর্মী দাবা খেলা। যাকে জাপানিজ চেজ বা দাবা – ও বলা হয়ে থাকে।শোগি বলতে সাধারণ বোর্ড খেলা কে বোঝায়।

এখন জেনে আসা যাক শোগির জন্মের ইতিহাস- দাবার একটি প্রকারভেদ চতুরঙ্গের প্রথম প্রচলন হয় ভারতে আনুমানিক সপ্তম শতকের দিকে। সেখান থকেই পশ্চিম ও উত্তরের দিকে এটার প্রচলন হতে থাকে এবং সাথে এর একটু আধটু পরিবর্তন ও চলতে থাকে।পশ্চিমের দিকে গিয়ে এটি হয়ে যায় ইউরোপে অর্থডক্স এবং আরবে হয়ে যায় সাতরঞ্জ।আবার চায়নায় হয়ে যায় ‘Xiangqi’ এবং কোরিয়াতে হয় ‘Janggi’। এভাবে আনুমানিক দশম থেকে দ্বাদশ শতকে দাবা জাপান পার করে যেখানে এই বোর্ড খেলার অনেক ভিন্ন ধাচের দাবার জন্ম হয়।তাদের মধ্যে একটিকে বলা হতো ছোট শোগি ‘Small Shogi’। এটাকে পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিমার্জনার মধ্যে দিয়ে সর্বশেষ বর্তমানের বড় পরিসরের শোগির জন্ম হয় বলে ধারণা করা হয়।

এখন আসি দাবার সাথে এর প্রধান একটি অমিলের জায়গা এবং বলতে গেলে আমার কাছে যে কারণে দাবার তুলনায় শোগি একটু কঠিন লাগে তা হলো এর গুটি গুলো,যাকে শোগি পিস ও বলা যেতে পারে। দাবায় যেমন রাজা,নৌকা,বোড়ে আছে এখানেও তেমনি আছে। কিন্তু দাবায় গুটি গুলোর যে নাম সেই নামের আদলেই তাদের গড়ন থাকে যেমন, ঘোড়া দেখতে অনেকটাই ঘোড়ার মত।কিন্তু শোগিতে কিন্তু তা হয় না।শোগিতে গুটির নাম গুলো গুটির উপরে লেখা থাকে তাও আবার জাপানিজ হরফে।ফলে আমাদের জন্য গুটি গুলো চেনা বেশ কষ্টসাধ্য ।তবে এ কষ্ট লাঘব করার জন্য আন্ডর্জাতিক মানের গুটি তৈরি হয়েছে যেখানে নাম অনুযায়ী গড়ন আঁকানো থাকে।শুরু থকেই শোগির পিস বা গুটি গুলো ছিল কাঠের তৈরি।এই সাধারণ গুটি গুলো কাঠের ফলক থেকে কেটে নেওয়া হতো পঞ্চভুজ আকারে এবং কাঠের ফলকের উপরে গুটি গুলোর নাম লেখা থাকত।

এবার আসি দাবার সাথে এর দ্বিতীয় তফাৎটিতে। আমরা সবাই জানি, দাবায় মোট ১৬ টি গুটি থাকে।কিন্তু শোগিতে থাকে ২০ টি করে।তবে শোগির সবচেয়ে পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটিতে একটি গ্রুপে মোট ১৬ টি শোগি গুটি রয়েছে। এই খেলায় দুইজন খেলোয়াড় থাকে এবং খেলার বোর্ডটিও দাবার মতো চতুর্ভুজ আকৃতির হয়ে থাকে।এতে ৯ টি সারি ও ৯ টি কলাম থাকে।অর্থাৎ এতে মোট ৮১ টি বর্গক্ষেত্র থাকে।জাপানি ভাষায় প্রথম খেলোয়াড়কে sente এবং দ্বিতীয় খেলোয়াড়কে gote বলা হয়ে থাকে।বোর্ডটি বিভিন্ন রঙের হতে পারে।প্রোমোশন জোন বোঝাতো প্রমোশন জোনের জায়গায় ডট দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে।

প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ২০ টি সমতল পঞ্চভুজাকৃতির সামান্য পার্থক্যবিশিষ্ট বিভিন্ন সাইজের গুটি থাকে।শুধুমাত্র রাজা বাদে বাকি বিরোধী দলের গুটি গুলো অপরিবর্তিত থাকে মার্কিং অথবা রঙের দ্বারা।গুটি গুলো বিরোধী দলের দিকে মুখ করে চলে।যার ফলে বোঝা যায় গুটি গুলো কোন পক্ষের অধীনে আছে। দাবা খেলার মতো এখানেও রাজা,নৌকা,ঘোড়ার মতো ৮ টি ভিন্ন ধরনের মোট ২০ টি গুটি আছে।

১ টি রাজা

১ টি নৌকা

১ টি হাতি

২ টি গোল্ড জেনারেল

২ টি সিলভার জেনারেল।

২ টি ঘোড়া

২ টি বর্শা

এবং ৯ টি বোড়ে।

এগুলোর বেশ কয়েকটি নাম ই নির্ধারণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের দাবার সাথে মোটামুটি সামঞ্জস্য রাখার জন্য।অর্থাৎ এই নাম গুলো সরাসরি জাপানিজ ভাষার অনুবাদ নয়। প্রত্যেকটা গুটির উপরি পৃষ্ঠে কানজিতে গুটি গুলোর নাম লেখা থাকে।আপনাদের মনে নিশ্চয় প্রশ্ন আসতে পারে কানজি কী? কানজি হলো জাপানি লেখ্য ভাষার একটি ধরণ।জাপানিজ’রা মূলত তিন ধরনের অক্ষর ব্যবহার করে থাকে লেখার জন্য।যেমন – হিরাগানা,কাটাকানা ও কানজি।কানজি মূলত চাইনিজ ভাষা থেকে আগত অর্থাৎ কানজি বলতে এখানে জাপানিজ ভাষায় যএ লেখা থাকে সেটিকে বেঝানো হয়েছে।লেখাগুলো থাকে কালো কালিতে লেখা।রাজা ও গোল্ড জেনারেল বাদে বাকি গুটি গুলোর বিপরীত পাশে আবার লাল রঙে লেখা থাকে।আপনার মনে হয়ত এখন প্রশ্ন আসতে পারে একটি গুটিতে কেন দুই দিকে দুই রঙে ভিন্ন নাম লেখা থাকবে।আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় খেয়াল করেছেন পূর্বে প্রোমোশন জোন এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।যখন কোনো গুটি প্রোমোশন জোনের ভেতর ঢোকে তখন সেই গুটির প্রোমেশন হয় ও সেটা বুঝতে তখন গুটি টিকে উল্টে লাল কালি দিয়ে লেখা পাশ উপরে রেখে খেলা হয়।

এখন জেনে নেওয়া যাক ৮ রকমের গুটির চলার পথ সম্পর্কে।কোন গুটি এক বারে কত দূর পথ অতিক্রম করতে পারে।প্রথমেই বলি খেলার প্রধান চরিত্র রাজার কথা।শোগির রাজা তার অবস্থান থেকে যেকোনো দিকে এক ঘর যেতে পারে অর্থাৎ আমাদের পরিচিত দাবার রাজার মতই তার ক্ষমতা।গোল্ড জেনারেল তার অবস্থানের দুই পাশের ঘর বাদে বাকি পাশের দিকে এক ঘর যেতে পারে।সিলভার জেনারেল কোনাকুনি যেকোনো দিকে এক ঘর অথবা তার অবস্থান হতে সামনে এক ঘর।শোগির ঘোড়াও দাবার মতোই লাফ দিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দাবার মতো সে সামনে পেছনে উভয় দিকে যেতে পারে না।এর ঘোড়া শুধুমাত্র সামনের দিকেই লাফ দিয়ে যেতে পারে।এখানে কিন্তু ঘোড়ার আবার প্রোমোশন হতে পারে।যখন ঘোড়াটি ৭ম সারিতে পৌঁছায় তখন তা উন্নীত ঘোড়া হয়।কিন্তু যদি ঘোড়াটি ৮ম ও ৯ম সারিতে পৌঁছায় তাহলে তার স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নতি হবে।যা গোল্ড জেনারেল এর সমান ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। ল্যান্স বা বর্শা তার অবস্থান থেকে সোজাসুজি যেতে পারে।বিশপ বা গজ কোনাকুনি ফাঁকা স্থান পর্যন্ত যেকোনো দূরত্বে যেতে পারে।আর নৌকা দাবার নৌকার মতই সামনে পেছনে ও দুই পাশে ফাঁকা স্থান পর্যন্ত যেকোনো দূরত্বে যেতে পারে এবং বোড়ে সোজাসুজি সামনে এক ঘর যেতে পারে।

আপনি হয়ত ভাবতে পারেন তার মানে শোগিতে বোড়ে আর দাবার বোড়ের চলন একই রকম,কিন্তু না। দাবার বোড়ে সামনাসামনি চললেও কোনো গুটি ধরার বা মারার ক্ষেত্রে কোনাকুনি যায়, কিন্তু শোগিতে বোড়ে বিপক্ষ দলের গুটিকে মারতে হলেও সামনাসামনি ই মারতে হয়।এখানে আবার শোগিতে খুব মজাদার একটি আলাদা বিশেষত্ব আছে।দাবায় কোনো গুটি ধরা পড়লে তা আর কেউ খেলতে পারে না।কিন্তু শোগিতে যদি এক দলের কোনো গুটি ধরা হয় তখন অপর দল ঐ গুটি নিজের গুটি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।এ দিক দিয়ে দেখতে গেলে দাবার তুলনায় শোগি একটু কঠিন।

কঠিন হোক বা যাই হোক খেলাটি যে বেশ মজাদার তা নিয়ে নিশ্চয় কোনো সন্দেহ নেই।

লিখেছেনঃআদৃতা ইদ্রিস দিশা

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।