বর্ষপঞ্জিকার ইতিহাসে ইংরেজি নববর্ষের আখ্যান

 বর্ষপঞ্জিকার ইতিহাসে ইংরেজি নববর্ষের আখ্যান

প্রতি বছরের মতো এই বছরটা একদম আনকোরা, দুঃখ-জড়ার মধ্যে দিয়ে গেলেও থার্টি ফার্স্ট নাইট কিন্তু তার আগমনের ব্যাপারে একটুও ভুলেনি। বরাবরের মতোই, সে এইবছরও হাজির নতুন সূচনা নিয়ে। বাঙালি, ইংরেজ, পার্সিয়ান, রোমান কিংবা পৃথিবীর যে কোন অধিবাসীই হোক না কেন, ইংরেজি নববর্ষ আগমনের পেছনেও রয়েছে জটিলতায় ঘেড়া ইতিহাস।

একেকজনের একেক মন্তব্য। ফলে বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ে বিভিন্ন রকমের তথ্য মিলে,

জানা যায়, মেসোপোটেমিয়ায় প্রায় খিস্ট্রপূর্ব ২০০০ অব্দে, সুমেরিয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞানে মৌলিক কিছু অবদানের চার সভ্যতার মাঝে ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় নববর্ষ পালনের রীতি শুরু হয়। আর ব্যবাবিলনীয়রাই প্রথম ষাট মূলক পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করেন, যার মাধ্যমে তারা তাদের বর্ষপঞ্জি বের করেন। তবে সেসময় এখনকার মতো জানুয়ারির এক তারিখে নয় বরং বসন্ত মাসে পালন করা হতো। যেহেতু বসন্তে প্রকৃতি রুক্ষতার আমেজ ঝেড়ে ফেলে সম্পূর্ণ নতুনরূপে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। একইভাবে, আমরা মায়া সভ্যতায়ও ষাটমূলক পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে বর্ষপঞ্জি দেখতে পাই। মূলত আকাশের বিভিন্ন অংশে সূর্যের অবস্থানের পরিবর্তন এবং নক্ষত্রসমূহের আপেক্ষিক অবস্থানের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে যেয়েই বর্ষ গণনা পদ্ধতির আবির্ভাব হয়। এরপর রোমানরা চাঁদের উপর ভিত্তি করে মার্চের এক তারিখে নববর্ষ পালন শুরু করে। আর এই বর্ষপঞ্জিকা রোমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, রোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট রোমিউলাস খৃষ্টপূর্বাব্দ ৭৫৩ এর দিকে প্রথম আবিষ্কার ও এর ব্যবহার শুরু করেন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির অস্তিত্ব না থাকায় রোমানদের ছিলো দশটি মাস। পরবর্তীতে, সম্রাট নুমা পল্টিলিয়াস এই বাকি দুই মাসকে ক্যালেন্ডারে যোগ করেন। অবাক করা ব্যাপার এই যে, কোন দিন-তারিখের বদলে তাদের গগণা ছিলো এরকমঃ পুরো চাঁদকে ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝিকে নুনেস ও চাঁদ উঠার সময়কে বলা হতো ক্যালেন্ডস। আর ২৯ দিনের মাসকে অপবিত্র ও ৩০ দিনের মাসকে পবিত্র মাস বলেও রোমানদের ধারণা ছিল। পরবর্তীতে, খৃষ্টপূর্বাব্দ ৪৬ এর সময় সম্রাট জুলিয়াস সিজার প্রথমে চাঁদের উপর নির্ভর করে দিন তারিখ যোগ করলে হিসেব দাঁড়ায় ৩৫৫ দিন। তারপরও সব পেশার মানুষদের সমস্যার কারণে জুলিয়াস সিজার সৌর মাসের ব্যবহার করেন গণনার কাজে এবং দিনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬৫ এবং ৪ বছর পর পর অধিবর্ষ হিসেব করে বর্ষপঞ্জির ব্যবহার শুরু করেন ৩৬৬ দিনের। এত চেষ্টার পরেও যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়াস সিজারের ক্যালেন্ডারে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। যার নামকরণ করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাবেই চলতে থাকে দিন, মাস এবং পালন করা হয় নববর্ষ। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এখনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।

বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে ইংরেজি নববর্ষ পালন শুরু হয় উনিশ শতক থেকে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে শুরু উৎসবের আমেজ।নতুন বছরের শুরুতেও কিছুদিন থেকে যায় আনন্দের রেশ। ধীরে ধীরে তা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে সৌদি আরব, ইরান, নেপাল, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। আমাদের বাংলার সমাজেও এখন সব বয়সের, ধর্মের মানুষও শুভেচ্ছা বিনিময়, পার্টির মাধ্যমে ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে।

লিখেছেনঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।