একজন স্বপ্নবাজ তরুণী রিমি’র গোলাপজানকে সাথে নিয়ে পথচলা

 একজন স্বপ্নবাজ তরুণী রিমি’র গোলাপজানকে সাথে নিয়ে পথচলা

একজন উদ্যোক্তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা উচিৎ, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নয়। কিন্তু এই মুহর্তে আমাদের দেশে নারী তথা নারী উদ্যোক্তা ও নারী পেশাজীবিরা পুরষদের মতো নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ পাননা। এটা সমাজের সমস্যা হোক, দেশের সমস্যা হোক- এটা একটা সমস্যা। নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবেলা করতে হয়না।আজ আমরা হাজির হয়েছি তরুণ উদ্যোক্তা রিমি খোন্দকারের গোলাপজানের গল্প নিয়ে।

আসসালামুয়ালাইকুম আপু কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপু।

আপনি কেমন আছেন?

জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

শুরুতে সংক্ষেপে আপনার পরিচয় জানতে চাই। (কোথায় জন্ম, বেড়ে উঠা, পরিবারে কে কে আছেন, কে কি করেন)?

জন্ম ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। বেড়ে উঠা মির্জাপুর গ্রামের বক্তারমুন্সীর খোন্দকার বাড়িতে। পরিবারে বাবা,মা,দাদী,তিন বোন আর এক ভাই রয়েছেন। বাবা দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন আর মা গৃহিণী।

কি হওয়ার ইচ্ছে ছিল? জীবনকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখতেন?

স্কুল জীবন থেকে ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হওয়ার।কারন লেখালেখি বা সমসাময়িক যেকোন ইস্যুতে আমি অনেক সচেতন ছিলাম। তাছাড়া রাজনীতির প্রতিও প্রবল আগ্রহ ছিল। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে মনে হল ব্যবসা করতে হবে,এটাতে লাইফ চেইঞ্জ হয় তাড়াতাড়ি।

পড়ালেখা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই ?

সোনাগাজী উপজেলার বক্তারমুন্সী মোয়াজ্জেম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দিয়ে এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ভর্তি হই ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে।উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে যাই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পড়ালেখার পর কিভাবে কর্মজীবন শুরু করলেন?

পড়ালেখার পর আসলে ওইভাবে কর্মজীবন শুরুর সময় পাইনি,এরমধ্যেই দেশে এলো করোনা,শুরু হলো লকডাউন। ভাবলাম এই সময়েই কিছু করতে হবে, তারপর শুরু হলো গোলাপজানের যাত্রা৷ (গোলাপজান আমার বিজনেস পেইজের নাম)।

ক্যারিয়ার জীবনের শুরুটা কীভাবে?

ক্যারিয়ার তথা উদ্যোক্তা হওয়ার প্ল্যান যেহেতু আগে থেকেই ছিল তাই কিছুটা এই বিষয়ে জেনে রেখেছিলাম।তবে মূলধন ছিল না বললেই চলে। মাত্র ২০ হাজার টাকার প্রোডাক্ট কিনে বিজনেস শুরু করি ।

আপনি তো উদ্যোক্তা, কি ধরণের কাজ করেন?

আমি কাজ করি মূলত দেশীয় শাড়ি,লুঙ্গী আর থ্রি পিস নিয়ে। সম্প্রতি নতুন যুক্ত করেছি বিলুপ্তির পথে থাকা মাটির খোলা নিয়ে। আমি কারিগর দিয়ে প্রস্তুত করাই,অনেক সময় ডিজাইন কাস্টমাইজড করে দিই। আপনার কাজের সম্পর্কে বলুন। আর পেইজের যাবতীয় কাজ,অর্ডার নেয়া,ডেলিভারি দেয়া সব কাজ আমিই করি।

দুনিয়ায় এত কিছু রেখে উদ্যোক্তা হলেন কেন?

আসলে আমি একটু ঠোঁট কাটা স্বভাবের। কারো অধীনে কাজ করা, নানা নিয়মনীতি মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়,স্বাধীনচেতাও বলা যায়। এজন্যই উদ্যোক্তা হওয়া,নিজেই নিজের বস।

কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করার পিছনে কোন জিনিসটি বেশি ভূমিকা পালন করেছে?

করোনায় আমার কিংবা আশেপাশের মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা আমাকে বেশি তাড়া দিয়েছে কিছু করার। মনে হয়েছে মানুষকে হেল্প করাটা জরুরী।

সে দিনগুলির কথা বলুন যখন আপনাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে?

আসলে সেভাবে সংগ্রাম করতে হয়নি।কারন আমার সবকিছুতে আমার বর আর পরিবারের সাপোর্ট ছিল সবসময়। আমার উদ্যোক্তা জীবনে আমাকে সবচেয়ে বেশি হেল্প করেছে আমার বর মাইনুল ইসলাম। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে শাড়ি বিক্রি করতেছি এটা নিয়ে অনেকেই পেছনে কথা বলে। আমি অবশ্য তাদের নিন্দাকে উৎসাহ দিই।

ব্যবসা ‍শুরুর সময় কারো কাছ থেকে বিনিয়োগ নিয়েছেন কি?

না,কারো থেকে বিনিয়োগ নিইনি।মাত্র ২০ হাজার টাকায় পথচলা শুরু,এরপর আর অল্প কিছু টাকা ইনভেস্ট করেছি।প্রোডাক্ট বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে পুনরায় আবার প্রোডাক্ট এনেছি, এইভাবে প্রায় গোলাপজান থেকে মাত্র তিন মাসে আমার সেল সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মতো সেল হয় উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম উই থেকে।মূলত আমার ই কমার্স ব্যবসার হাতে খড়ি হয় রাজীব আহমেদ ভাইয়ার থেকে৷ রাজীব ভাইয়ার লেখা,নাসিমা আক্তার নিশা আপু আর উইয়ের সকলের পোস্ট দেখে উদ্যোক্তা হতে ভরসা পাই।

উদ্যোক্তাদের ব্যবসার শুরু থেকেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কি ছিলো? এবং সেগুলো কিভাবে অতিক্রম করলেন?

প্রোডাক্ট সোর্সিং, ডেলিভারি, গ্রাহকদের থেকে নতুন পেইজ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া,লকডাউন নানা সমস্যা ছিল।সাথে মূলধনের সমস্যাতো ছিলই। আমি সবকিছু ধৈর্য দিয়ে অতিক্রম করেছি।প্রচুর অর্ডার থাকলেও আমি মূলধন সংকটের জন্য ডেলিভারি দিতে পারিনি।তখন নিজেকে বুঝিয়েছি আস্তে আস্তে আগাবো।

ব্যবসায় দীর্ঘ দিন সময় দিয়ে কি কি বিষয় শিখতে পারলেন?

যেকোন কাজে ধারাবাহিকতা খুব জরুরী। নিয়মিত কাজ করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

জীবনে কোন প্রাপ্তি/অর্জন? গোলাপজান ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন?

গোলাপজান নিয়ে এগিয়ে যাব। ইনশাআল্লাহ সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

নিয়মিত এবং ধারাবাহিক ভাবে কাজ করা,সব রেষারেষি বাদ দিয়ে।

ধন্যবাদ আপু আপনার ও আপনার উদ্যোগের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন:খাতুন-ই জান্নাত বিবি ফাতেমা

RedLive

Related post