পারিবারিক বাঁধা অতিক্রম করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন আরিফা আক্তার

 পারিবারিক বাঁধা অতিক্রম করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন আরিফা আক্তার

সিদল রংপুরের প্রতিটি পরিবারের কাছেই কমবেশি পরিচিত। ছোট মাছের শুকনো শুঁটকি আর কচুর ডাটা দিয়ে তৈরি হয় সিদল। সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আদা, রসুন, হলুদ, সরিষার তেল, খাবার সোডা আর এলাচও দিতে হয়। সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বাদের কারণে সিদল রংপুর অঞ্চলের মানুষের একটি অতিপ্রিয় খাবার। এটা শীতকাল এবং বর্ষার মৌসুমে সকালের খাবারে গ্রামাঞ্চলে বেশি খেতে দেখা যায়। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার সিদল, শুক্তানি, চিনি গুড়া আতপ চাল, নকশীকাঁথা দিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন রংপুরের মেয়ে আরিফা আক্তার।স্ব-প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন তার ব্যাবসায় ” প্রসিদ্ধ “।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মিরপুরের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

আপনার সম্পর্কে জানতে চাই?

আমি আরিফা আক্তার পেশায় একজন শিক্ষিকা।রংপুর জেলার সদর থানার মেয়ে। আমি এস এস সি পাশ করি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে।এইচ এস সি পাশ করি সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবিথী কলেজ থেকে।বি এ পাশ করি রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এবং মাস্টার্স করি দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। আমার স্বামী জে টি আই কোম্পানিতে কর্মরত আছেন।

আপনি কিভাবে উদ্যোক্তা হলেন?

করোনা মহামারী সময় ২০২০ সালে যখন বিদ্যালয় গুলো বন্ধ হয়ে যায় ঠিক তখনই ছোটবোনের মাধ্যমে উই এর সাথে যুক্ত হই। ছোটবেলা থেকেই আমার হাতের কাজের প্রতি বরাবরই আগ্রহ ছিলো।আর এই আগ্রহটা জেনো ডানা মেলতে শুরু করে উই এ যুক্ত হয়ে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হওয়ার কারণে।যদিও আমি সরকারি চাকরি করি তারপরও কেন আমি উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখেয়েছি।তার কারণ বলতে গেলে বলবো আমি যখন নিজেকে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলাম তার জন্য আমি হাতের কাজ,সেলাই মেশিন চালানো,এমনকি গরু,ছাগল পালন পর্যন্ত করেছি।কিন্তু এতে কোনভাবেই শ্বশুড় বাড়ির সাপোর্ট পাইনি। তার পর লেগে গেলাম চাকরির জন্য।এতেও শাশুড়ী মায়ের বাধা ছিলো প্রচন্ড। কোন ভাবেই আমাকে বাড়ির ভেতরে বাইরে কিছু করতে দিবে না। এদিকে বাবার উৎসাহ ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় চাকরি করার নিয়তে পড়াশোনা ও সংগ্রাম করতে লাগলাম প্রতিনিয়ত। শাশুড়ী মা আমাকে স্বাবলম্বী হতে না দেওয়ার জন্য আমাকে দিয়ে সংসারের সব কাজ করাতেন।আর এটাই ছিলো আমার স্বাবলম্বী হওয়ার পিছনে প্রবল আগ্রহ জন্মেছিলো।

সারাদিন সংসারের কাজ করে, সন্তান সামলিয়ে গভীর রাতে পড়াশোনা করেছি আর আল্লাহর উপর ভরসা করেছি যে আল্লাহ তার বান্দারের নিরাশ করে না। না শাশুড়ী কিংবা শশুড় বাড়ির কাউকে অবহেলা করে নয় বরং সবাইকে যোগ্য সম্মান দিয়ে আমি আমার লক্ষ্যের দিকে একনিষ্ঠ ভাবে এগিয়েছি।অবশেষে আমি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জয়েন করি। উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ যেটা সেটা হলো আমি দেখাছি চাকরি প্রস্তুতি নিতে গিয়ে।টাকা পয়সা ছাড়া মেধায় একটা চাকরি পাওয়া আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খুবই কঠিন।একজন উদ্যোক্তা হওয়া কিন্তু তেমন কঠিন নয়।উদ্যোক্তা হতে শুধু প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রমি হওয়া,কাজের প্রতি একনিষ্ঠ মনোবল। আর আজকে আমি যদি একজন উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে একই পথ ধরে আমার সন্তান ও সমাজের আরো অনেকেই উৎসাহ পাবে এবং উদ্যোক্তা হতে নিজেকে নিয়োজিত করবে। দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করাটাও আমাকে বেশি বেশি অনুপ্রাণিত করে।আর এ কারণেই আমার উদ্যোক্তা হওয়া।

আপনি কি কি প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করেন?

আমি দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করি।রংপুরের ঐতিহ্য বাহী সিদল,শুক্তানি, চিনি গুড়া আতব চাল, নকশীকাঁথা ও রংপুরের বেনারশি পল্লীর শাড়ি নিয়ে কাজ করছি।

উদ্দোক্তা হতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না এবং সবচেয়ে বেশি কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

আমি যেহেতু চাকরি করি সেই জন্য বাধার সম্মুখীন তেমন হইনি।তার পরও এখানেও বাধায় পড়েছিলাম শাশুড়ী মায়ের। শাশুড়ী মায়ের বাধাকে অগ্রাহ্য করে আমি আমার উদ্দোক্তা জীবন শুরু করি। আমার মা,বোন ও স্বামীর সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আমার আশেপাশের অসহায় এবং বেকার নারীদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়াতে পারি।

RedLive

Related post