বাড়ির খাবারেই হোক ব্যবসায় বাজিমাত!

 বাড়ির খাবারেই হোক ব্যবসায় বাজিমাত!

Image Source:Sheknows

কি? অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন বাড়িতে বানানো খাবার আবার কিভাবে উপার্জনের মাধ্যম হয়?তাহলে শুনুন, বর্তমানে কিন্তু অনলাইনভিত্তিক হোমমেইড ফুড বিজনেস বা বাড়িতে বানানো খাবারের ব্যবসা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম মূলধনে অধিক লাভ, নিজের বাসস্থান থেকে কাজ করার সুবিধা পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় সহজেই নিজের ব্যবসাকে তুলে ধরার সুযোগ থাকায় আজকাল অনেকেই এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। নিজেদের গড়ে তুলছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।তাই আজকের এ লেখায় থাকছে কিভাবে খুব সহজে অনলাইনে হোমমেইড ফুড বিজনেস শুরু করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু খুঁটিনাটি তথ্য যা একদম নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হবে৷

টিপস ১: ধৈর্য্য রাখুন।

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, কোনো কাজেই সফলতা একদিনে আসেনা। সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং অবশ্যই কাজের প্রতি ভালোবাসা। তাই কেউ যদি এ ব্যবসায় আসতে চান, অবশ্যই এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে৷

টিপস ২ : খাবারের ধরণ নির্ধারণ করুন ।

আপনি কোন ধরনের হোমমেইড ফুড নিয়ে কাজ করতে চান শুরুতেই তা ঠিক করে ফেলুন। এতে করে আপনার কেমন মূলধন প্রয়োজন সে ব্যাপারেও একইসাথে ধারনা পেয়ে যাবেন। বর্তমানে প্রায় সবধরনের হোমমেইড খাবারই অনলাইনে পাওয়া যায়। তাই আপনি কোন ধরনের খাবার দিয়ে আপনার ব্যবসা শুরু করবেন তা অত্যন্ত সুকৌশলে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার বানানো কোন খাবারগুলো সবাই পছন্দ করে সেটির একটি তালিকা করতে পারেন এবং সেটি থেকেই নির্ধারণ করতে পারেন যে কোন ধরনের খাবার দিয়ে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করবেন কেননা সেগুলোই হতে পারে আপনার সিগনেচার ডিশ যেটির মাধ্যমে আপনাকে সবাই চিনবে। শুরুতে আপনার খাবারের আইটেমের লিস্ট ছোট রাখুন৷ নিজের সিগনেচার আইটেমগুলো নিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করুন। যদি সেগুলো জনপ্রিয়তা পায় তারপর আইটেমের লিস্ট বাড়ান।

Image Source:Jungleworks

টিপস ৩ :খাবার ডেলিভারিতে সচেতন হোন।

হোমমেইড ফুড বিজনেস করার ক্ষেত্রে যাদের দিয়ে খাবার ডেলিভারি করাবেন তারা যেন বিশ্বস্ত হয় এবং খাবার যেন সময়মতো ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয় এটি অবশ্যই নিশ্চিত করবেন। কেননা আপনার রান্না করা সুস্বাদু খাবারটি দেরিতে পৌঁছাবার কারনে নষ্ট হয়ে গেলে আপনার ব্যবসাতেই কিন্তু বিরূপ প্রভাব পড়বে।

টিপস ৪ : উপস্থাপনায় গুরুত্ব দিন।

আপনার কাজকে সোশাল মিডিয়ায় সঠিকভাবে প্রচার করার জন্য যথেষ্ট সময় এবং শ্রম দিন। আপনার হাতের রান্না যতই ভালো হোক না কেন আপনি যদি নিজের কাজকে সোশাল মিডিয়ায় ঠিকভাবে উপস্থাপন কর‍তে না পারেন তাহলে কোনো লাভই হবেনা। তাই ব্যবসার শুরু থেকে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। খাবারের ছবিগুলো পর্যাপ্ত আলোতে সুন্দরভাবে তুলুন। আপনার দামী ডিএসএলআর থাকার দরকার নেই, মোবাইলের ক্যামেরাতেই সুন্দরভাবে তুলুন। যেন ছবিগুলো ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। মনে রাখবেন, যেহেতু বর্তমানে অনেকেই এ কাজের সাথে জড়িত, তাই আপনাকে এগিয়ে থাকতে হলে অবশ্যই বাড়তি শ্রম দিতে হবে।

টিপস ৫ : ক্রেতাদের সাথে নম্র ব্যবহার করুন।

সবসময় ক্রেতাদের সাথে ঠান্ডা মাথায় ভালোমতো কথা বলার চেষ্টা করবেন৷ অনেকেই থাকবে যারা আপনার থেকে কিছুই কিনবেনা কিন্তু আলাপ জমাতে চাইবে, এটা ওটা জিজ্ঞেস করবে। তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলুন৷ আপনার নম্র ব্যবহার আপনাকে কম সময়ে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

Image Source:REVE Chat

টিপস ৬ : তথ্য বিনিময়ে সতর্ক হোন ।

এই টিপসটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো কখনোই নিজের ব্যবসার কোনো গোপন তথ্য অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেননা।কেউ জিজ্ঞেস করলেই আবেগের বশে নিজের সিগনেচার ডিশের রেসিপি বলে দেবেননা। আপনার ব্যবসা আপনার তিলে তিলে দাঁড় করানো অর্জন৷ সেটি অন্য কাউকে নষ্ট করার সুযোগ ভুলেও দেবেননা।

টিপস ৭ : সাহস রাখুন বাঁধা পেরোনোর হতে পারে

আপনি সাহস করে হোমমেইড ফুড বিজনেস শুরু করলেন, আপনার চলার পথে অনেক বাধা আসতে পারে। সেগুলোকে পাত্তা দেবেননা। যদি আপনার মনে ইচ্ছা এবং সাহস থাকে, তাহলে অল্প মূলধন নিয়ে শুরু করে দেখুন, আপনাকে কেউ ঠেকাতে পারবেনা !

Image Source:Cnet

টিপস ৮ : খাবারের কোয়ালিটিতে কমপ্রোমাইজ করবেননা।

আপনার রান্না করা খাবারের কোয়ালিটি সবসময় বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজন হলে প্রতিদিন একই প্রতিষ্ঠানের পণ্য ব্যবহার করে রান্না করুন, রান্নার সময় পরিমান একই রাখার জন্য মেজারমেন্ট কাপ ব্যবহার করুন৷ যেন আপনার খাবারের স্বাদ প্রতিদিন একইরকম থাকে।পাশাপাশি খাবার প্যাকিংয়ের ব্যাপারেও যত্নশীল হোন। প্লাস্টিকের সস্তা বক্স ব্যবহার না করে ভালো মানের বক্স ব্যবহার করুন। নজর দিন খাবারের প্যাকেটের উপরে থাকা বিলের কাগজটিতেও৷ ছোট্ট করে কিছু লিখে দিন ক্রেতাকে। পারলে খাবার ডেলিভারি দেয়ার পর ক্রেতাকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে খাবার কেমন ছিলো। কেননা ক্রেতার ফিডব্যাক আপনার ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

টিপস ৯ : খাবারের মূল্য নির্ধারণে কৌশলী হোন।

খাবারের মূল্য ঠিক করার ক্ষেত্রে কৌশলী হোন। নতুন ব্যবসা বলেই একেবারে কম রাখবেননা খাবারের মূল্য। আপনার ব্যবসার প্রোমোশনের জন্য ডেলিভারি চার্জ ফ্রি করলেও করতে পারেন তবে খাবারের মূল্য কখনোই খুব বেশি কমাবেন না। আবার বেশি দাম ও চাইতে পারবেননা। আপনার মূলধন,খাবার তৈরিতে খরচ, ডেলিভারির খরচ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে খাবারের দাম ঠিক করুন।

টিপস ১০ : ক্রেতার জিজ্ঞাসার উত্তর দিন ।

সময়মতো যদি আপনার ব্যবসা সোশাল মিডিয়াভিত্তিক হয়, তবে সোশাল মিডিয়ায় ক্রেতা যেন তাড়াতাড়ি আপনার থেকে তার প্রশ্নের উত্তর পায় সেটি খেয়াল রাখুন। কেননা যেহেতু আপনার ব্যবসা পুরোটুকুই সোশালমিডিয়াভিত্তিক, তাই সেখান থেকে আয় করতে হলে আপনাকে সোশাল মিডিয়ায় অবশ্যই অ্যাকটিভ থাকতে হবে৷ প্রয়োজনে বাড়ির কাউকে বলুন সাহায্য করতে।

পরিশেষে এটুকু বলতে পারি, এ ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। একবার পরিচিতি পেয়ে গেলে আপনাকে আর পেছন ঘুরে তাকাতে হবেনা। তাই আপনি যদি ভালো রাঁধুনী হয়ে থাকেন এবং বাড়িতে থেকে নিজেরমতো কাজ করতে চান তাহলে হোমমেইড ফুড বিজনেসের কাজ শুরু করে দিতে পারেন।কে জানে হয়েও যেতে পারেন ভবিষ্যতের একজন সফল উদ্যোক্তা!

লিখেছেনঃ সুমাইয়া রহমান

RedLive

Related post