যার জীবন মানেই যুদ্ধ – মুনিরা

 যার জীবন মানেই যুদ্ধ – মুনিরা

আমাদের প্রত্যেকেই জন্মের পরপরই বাবা মায়ের আদর স্নেহ দিয়ে বেড়ে উঠি।সকলের চোখে সপ্ন থাকে। কিন্তু আজ কথা বলছি এমন একজন কে নিয়ে যিনি কিনা অনেক কস্ট যুদ্ধ অতিক্রম করে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন।জন্মটাই ছিল যার কস্ট নিয়ে।নানান চড়াই-উৎরাই পার হয়ে যিনি আজ উদ্যোক্তা। হ্যা কথা বলছি বরিশালের কাজিপাড়ার সিরাজাম মুনিরা কে নিয়ে।সিরাজাম মুনিরা অর্থই উজ্জলকারী প্রদীপ।তিনি নিজেও প্রদীপ এর মতই জ্বলছেন। তিনি ১৯৮০ সালের ৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

আপনার পরিবারে কে কে আছেন?

আমার বাবা এস এম আব্দুল খালেক। তিনি ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা গৃহিনি। আর আমরা দুই বোন দুই ভাই। আমিই সবার বড়।

আপনার পড়াশোনা?

আমি ১৯৯০ সালে বগুড়া নথুল্লাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনি তে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ন হই। ১৯৯১ সালে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ষষ্ঠ শ্রেণি তে ভর্তি হই। ১৯৯৬ সালে এস এস সি পরীক্ষা দেই আর প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হই। এরপর সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হই। ১৯৯৮ সালে এইস এস সি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২য় বিভাগে উত্তীর্ন হই। সরকারি ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সে সমাজকল্যাণ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। ২০০১ সালে ২য় বিভাগে অনার্স পাশ করি। ২০০৩ সালে মাস্টার্স শেষ করি।

আপনার বিবাহ জীবনের শুরু কখন?

আমি ১৯৯৯ সালের ১লা নভেম্বর সাইদুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। বরিশালের প্রতাপশালী পরিবারে আমার বিয়ে হয়। স্বামী বিদেশে ছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু দেশে ফেরার পর আর কিছু করতে পারেননি। বিধিবাম,সংসার আমার কাঁধে তুলে নিতে হলো।

এই সংগ্রাম কতটুকু কঠিন ছিল?

পথটা কঠিন ছিল। শুরুতে একটা স্কুলে চাকুরি করতাম। পাশাপাশি একটা কোচিং পরিচালনা করতাম। এটাই ছিল আয়ের প্রধান উৎস। বাবা মারা গেলেন ২০০৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর। ভাইবোন তখনও ছোট। তাদের সকল দায়িত্বও কাঁধে নিলাম। সবাই কে ঢাকায় নিয়ে এলাম। এক এক করে মানুষ করলাম। বোন বিয়ে দিলাম ভাইদের পড়াশোনা করালাম। ভাইদের বিয়ে দিলাম। তাদের সুখের জন্য নিজের কোচিং ছেড়ে দিলাম। শূন্য হাতে বনশ্রী এসে আবার যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি। ঠিক সে সময় করোনার ভয়াল থাবার আগ্রাসন। বাঁচতে হবে!!!! এবার নতুন পথের মোড়!!!

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা কিভাবে?

বড় মেয়ে আদৃতা ২০১৭ সালে এক ফেসবুক পেইজ খুলে দিল রসনা বিলাস নামে। বলল মাম্মি এটাকে কাজে লাগাও। একটু করে শুরু করলাম। কিন্তু এভাবে তো কাজ এগোবে না। শুরু করলাম পথ চিনতে কিভাবে আগানো যায়।

উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন বহুকালের। অনেক অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু মনে হলো এ মুহুর্তে রান্নাটা বেশি কাজে দিবে তাই শুরু করলাম হোম মেইড ফুড ডেলিভারি সার্ভিস। সাড়া ও পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাই খুশি। কাজের আনন্দ এখানে।

উদ্যোক্তা হওয়াটা সহজ ছিল কিনা?

উদ্যোক্তা হতে পারা খুব সহজ নয়। বহু পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। শিক্ষকতা থেকে উদ্যোক্তা হতে আবার নতুন করে শিখতে হচ্ছে। শিক্ষকতা একরকম আর উদ্যোক্তা সম্পূর্ন অন্যধারার। তাই এটা আয়ত্ব করতে যথেস্ট দক্ষতার প্রয়োজন। আর এ জন্য যথেস্ট পড়াশোনা করতে হচ্ছে। আরো বেশি যেটা দরকার সেটা হলো ধৈর্য্য ধারণ করতে হচ্ছে। দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই। তবু ও সামনে আগাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমি পারি আমি পারব।

উদ্যোক্তা হতে সাপোর্ট কেমন পাচ্ছেন?

আমি এখন স্বাধীন। আমার সন্তান রা যথেস্ট সাহস দিচ্ছে। ওরা ই বেশি আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন?

আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছি আমার এই রসনা বিলাস অনেক বড় হবে এজন্য খুব চেস্টা করে যাচ্ছি।

RedLive

Related post