সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে শূন্য থেকে হয়ে উঠুন সফল উদ্যোক্তা!

 সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে শূন্য থেকে হয়ে উঠুন সফল উদ্যোক্তা!

Image Source : Pixabay

একদম সিনেমার গল্পের মতো সাজানো গোছানো জীবন কে না চায়?নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সফলতাকে ছুঁতে পারার স্বপ্ন প্রত্যেকেরই থাকে।আমাদের সমাজে পড়াশোনা শেষে বড় চাকুরি পাওয়াকেই সফলতা বলা হয়৷  তবে সমাজস্রোতের বিপরীতে চলা অনেকেই রয়েছেন যারা চাকুরী না করে  তাদের ভেতরের শৈল্পিকতা এবং সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগিয়ে স্বাধীনভাবে কিছু একটা করতে চান।এই স্রোতের বিপরীতে চলার সাহস থাকা মানুষগুলোই হয়ে উঠতে পারেন আগামী দিনের এক একজন সফল উদ্যোক্তা।

অনেকে উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী এ দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন। ব্যবসায়ী হতে চাইলে পুঁজি এবং পরিশ্রম সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন  তবে একজন উদ্যোক্তা হতে চাইলে পুঁজি, মেধা, গবেষণা, শৈল্পিকতা, স্বাতন্ত্র‍্য, পরিশ্রম, ধৈর্য্য ইত্যাদির সমন্বয় প্রয়োজন। আজকের লেখায় থাকছে কিভাবে অল্প পুঁজিতেই নিজের সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগিয়ে আপনারা কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবেন সে বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা যেটি থেকে আশা করছি অনেকেই উপকৃত হবেন৷ 

কিভাবে শুরু করবো? 

উদ্যোক্তা হতে চাইলে সবার আগে প্রয়োজন ধৈর্য্য এবং ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা। আপনি চাইলেই একদিনে সফল উদ্যোক্তা হতে উঠতে পারবেননা।একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে আপনাকে নিজের পরিশ্রমের ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য্যের সাথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যেকোনো সময় আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতির বা লোকসানের সম্মুখীন হতে পারেন। এ দুটি বিষয় মাথায় রেখেই আপনাকে উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করতে হবে।এছাড়া সবসময় মনে রাখবেন, প্রতিটি ভালো কাজের সামনেই বাধা আসে। হয়তো আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব আপনার উদ্যোক্তা হতে চাওয়াটা ভালোভাবে গ্রহণ করতে চাইবেনা।  এক্ষেত্রে আপনাকেই দায়িত্ব নিয়ে তাদের বোঝাতে হবে যেন তারা আপনার আগ্রহকে  সমর্থন করে। যত বাধাই সামনে  আসুক, নিজ উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন৷ 

Image Source : Pixabay

পুঁজি কম  কী করবো? 

বর্তমানে অনেকেই রয়েছেন যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হতে চান। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মূলধন বা পুঁজি তেমন থাকেনা। আমাদের চারপাশে একটি ভুল ধারনা প্রচলিত রয়েছে যা হলো উদ্যোক্তা হতে প্রচুর পুঁজির প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্য নয়। বরং বর্তমানে অনেক সফল উদ্যোক্তা আমাদের আশেপাশেই রয়েছেন যারা কম পুঁজি থাকা সত্ত্বেও নিজের সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগিয়ে সফলতার স্বাদ পেয়েছেন৷ তাই যদি পুঁজি কম থাকে তাহলে চিন্তার কোনো কারন নেই। শুধুমাত্র কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করা শুরু করবেন সেটি নিয়ে আপনাদের একটু কৌশলী হতে হবে। 

কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করবো? 

এবার আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।আপনি কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করবেন সেটি আপনার উপর নির্ভর করে কেননা একেকজন একেকটি ক্ষেত্রে পারদর্শী।  হ্যান্ডমেইড গয়না বানাতে পারেন, গ্লাসপেইন্ট করতে পারেন, হ্যান্ড পেইন্টেড টি শার্ট বা কুর্তি নিয়ে কাজ করতে পারেন, এমনকি নিজহাতে শাড়ির ডিজাইন ও করতে পারেন, তৈরি করতে পারেন কাস্টমাইজড  স্টেশনারি আইটেম, হাতে তৈরি শোপিস বা ওয়ালম্যাট নিয়ে কাজ করতে পারেন এছাড়া আরো অনেক সৃষ্টিশীল ক্ষেত্র রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে আপনারা সহজেই অল্প পুঁজি থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে আপনি নিজে কোন ক্ষেত্রে পারদর্শী। আপনার দক্ষতা, ভালোলাগা,পুঁজি ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে যেকোনো একটি ক্ষেত্র বেছে নিন যেনো সেটিতেই আপনি ভালোমতো সময় দিতে পারেন। অনেকগুলো ক্ষেত্রে একইসাথে কাজ করতে যাবেননা কারণ তাহলে কোনোটিতেই ঠিকমতো সময় দিতে পারবেননা। 

কাঁচামাল কোথায় পাবো?

এ ব্যাপারে আপনাকে একটু গবেষণা করতেই হবে।কেননা সাধারণত অন্য উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের কাঁচামাল কোথা থেকে কেনেন তা আপনাকে বলতে চাইবেনা ব্যবসায়ীক গোপনীয়তা রক্ষার জন্য৷সুতরাং  প্রথমে গুগলে সার্চ করুন,এরপর দুই একদিন নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চকবাজার এসব জায়গায় ঘুরে দেখুন কোথায় কোন কাঁচামাল কম দামে পাওয়া যায়। নিজেই খুজে বের করার চেষ্টা করুন আপনি আপনার পণ্যের কাঁচামাল কোথা থেকে কিনবেন।  এটি খুব কঠিন কাজ ও নয়। শুধু প্রয়োজন একটু গবেষণা আর ঘোরাঘুরি ! 

Image Source : Pixabay

পণ্যের মূল্য কেমন হবে?

একটি বিষয় মাথায় রাখবেন। কখনো খুব বেশি লাভ করার জন্য পণ্যের মূল্য খুব বেশি বাড়িয়ে দেবেননা কারণ  অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে কেউই আপনার পণ্য কিনতে চাইবেনা।  আবার পণ্যের মূল্য খুব বেশি কমিয়েও দেবেননা কেননা তাতে অন্য উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমনভাবে পণ্যের মূল্য ঠিক করুন যাতে করে আপনি লাভবান হতে পারেন পাশাপাশি  বাকি উদ্যোক্তারাও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন৷ 

Image Source : Pixabay

পণ্যের প্রচার বাড়াবো কিভাবে?

সামাজিক যোগাযোগের জামানায় এটি খুবই সহজ। প্রথমে ফেইসবুক বা ইনস্টাগ্রামে একটি পেইজ খুলে ফেলুন। তারপর আপনার তৈরি পণ্যের ভালো কোয়ালিটির কিছু ছবি সেখানে প্রকাশ করুন। ছবির সাথে পণ্যের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করুন। মনে রাখবেন,পণ্যের সুন্দর ছবি এবং সাবলীল ভাষায় পণ্য সম্পর্কিত তথ্যের উপস্থাপনা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। পণ্যের প্যাকেজিং এর ব্যাপারে যত্নশীল হোন, কাস্টমাইজ করা যায় এমন পণ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতার পছন্দকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলুন, ক্রেতাদের সাথে বিনয়ী ভাষায় কথা বলুন,দেখবেন এমনিতেই আপনার পণ্যের প্রচার বাড়বে! 

আমাদের চারপাশে অনেকেই রয়েছেন যারা বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজে পারদর্শী।কিন্তু সাহস এবং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তারা কাজ শুরু করতে পারছেননা৷তাদের বলছি, সাহস করে একবার শুরু করেই দেখুননা? আপনারাই হয়ে উঠতে পারেন আগামী দিনের সফল উদ্যোক্তা। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজে লেগে পড়ুন,এগিয়ে যান বীরদর্পে। দেখবেন সাফল্য হাতে ধরা দেবেই!

লিখেছেন : সুমাইয়া রহমান 

RedLive

Related post