আমার উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চাই – উদ্যোক্তা নাঈমা

 আমার উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চাই – উদ্যোক্তা নাঈমা

উদ্যোক্তা যে কেউ হতে পারেন। সফল হওয়াটা ভিন্ন ব্যাপার। উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার রাস্তা কিন্তু সহজ নয়। তাই উদ্যোগ নেয়ার আগেই যাচাই করে নিতে হয় উদ্যোগের সম্ভাব্যতা।একজন সফল উদ্যোক্তা তার বাস্তব জীবনে দৃশ্যপটের যথাযথ প্রয়োগে সফলতা অর্জনে সক্ষম হন।তেমনি নারী উদ্যোক্তা হলেন মোসাম্মৎ জান্নাতুন নাঈম(নাঈমা) যিনি কাজ করে যাচ্ছেন মূলত দেশীয় পোশাক নিয়ে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মিরপুরের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

-শুরুতে আপনার পরিচয় জানতে চাই।

-আমি মোসাম্মৎ জান্নাতুন নাঈম (নাঈমা)।১৯৯১ সালের ২৪শে মে নোয়াখালী সদর উপজেলায় একটি মুসলিম মধ‍্যবিত্ত যৌথ পরিবারে আমার জন্ম।আমার আব্বু ও মায়ের তিন মেয়ের মধ‍্যে আমি বড়।আমাদের কোনো ভাই নেই।জন্ম এবং বেড়ে উঠা নোয়াখালীতেই।২০১৩ সালের ২২ আগষ্ট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।আমার বর মুরশিদুর রহমান (শাহেদ) যিনি একজন বেসরকারি চাকরীজীবি।বিয়ের পর স্থান পরিবর্তনের কারণে মাস্টার্স কমপ্লিট করা হয় ঢাকাতে।বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ(‍Under Of DU) থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স কমপ্লিট করি।বর্তমানে আমি ল’ স্টুডেন্ট এবং একজন নারী উদ‍্যোক্তা। ব‍্যক্তিগত জীবনে আমি তিন বছরের একটি কন‍্যা সন্তানের মা। আমার বর্তমান অবস্থান নোয়াখালী।

-আপনার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার শুরুর দিকের গল্পটা জানতে চাই?

-ছোটবেলা থেকে আমি নিজের মতো স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করতাম।ধরাবাধা নিয়মে কিংবা চাপিয়ে দেওয়া কোনো কাজ কখনো ভালো করতে পারতাম না যদি না আমার ভালো না লাগতো,আগ্রহ না থাকতো। শিক্ষকতা পেশা আমার অনেক ভালো লাগার একটা পেশা,সে ভালো লাগা থেকে বিয়ের আগে একটা প্রাইভেট স্কুলে জব করি,বিয়ের পর স্থান পরিবর্তনের কারণে জব ছেড়ে ঢাকায় চলে যাই,ওখানে পরে আরো দুইটা স্কুলে জব করি কিন্তু বেশীদিন কোনো স্কুলে জব করা হয় নি,কারণ সময় আর কিছু নিয়মের সাথে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। এজন‍্য চাইতাম এমন কোনো কাজ যা আমি স্বাধীনভাবে করতে পারবো। এর মধ‍্যে আমার মেয়ের জন্ম,ওর জন্ম যতটা আমাকে আনন্দ দিয়েছে আবার কিছুটা চিন্তিত হলাম,ভাবলাম ওকে নিয়ে বোধহয় আর জব করা কখনো সম্ভব হবেনা,ভাবতে থাকি কি করা যায়।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেইসবুকে দেখি অনেকেই বিজনেস করছে,সবার কাজ দেখতাম,একদিন বরকে বললাম আমিও অনলাইনে বিজনেস করতে চাই।আমার মনেহলো এই কাজটা করতে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের প্রয়োজন হবেনা,মেয়ের দেখাশোনা,সংসার,নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি এই কাজটা আমি করতেই পারি। বর সাপোর্ট করলো,এরপর মাত্র ১০০০ টাকা দিয়ে আমি আমার অনলাইন বিজনেস শুরু করি,শুরুতে অল্প পরিমাণ ‘রূপচর্চায় ব‍্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদান’ নিয়ে আমার যাত্রা শুরু। টুকটাক সেল হলেও ওভাবে তেমন কিছুই শুরুতে বুঝতাম না।

একদিন ফেইসবুক নিউজফিডে ‘উই’ গ্রুপটা দেখি,কৌতূহলবশত জয়েন করি,নতুন করে চিনলাম শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স‍্যারকে,স‍্যারের পোস্টগুলো পড়তাম,প্রতিটি লেখায় শেখার অনেক কিছু ছিল,সে সাথে গ্রুপের অন‍্য সদস‍্যদের পোস্ট পড়ে অনুপ্রাণিত হতাম অনেক। এরপর শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স‍্যারকে ফলো করে সন্ধান পেলাম স‍্যারের নিজের আরেকটি গ্রুপ ‘ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ ‘-এর যা শেখার জন‍্য একটি সেরা প্ল‍্যাটফর্ম। জয়েন হই ঐ গ্রুপে,ঐ গ্রুপে আমার নতুন করে শেখার শুরু। নিজেকে একজন সফল উদ‍্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন‍্য নিজের সাথে আমার নিজের লড়াই। আলহামদুলিল্লাহ্,সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমি উদ‍্যোগে সিরিয়াস হই,সাহস করেছি নিজের পেজের নামে শপ দেওয়ার,এজন‍্য আমি শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স‍্যারের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।এখন আমি গর্ব নিয়ে বলতে পারি আমি একজন উদ‍্যোক্তা।

-আপনি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন?

-দেশীয় প্রায় সব পোশাকেই আমার দূর্বলতা আছে,সেই দূর্বলতা থেকেই আমি মূলত দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করেছি।আমার প্রধান পণ‍্য হলো দেশীয় বিভিন্ন ধরণের শাড়ি,থ্রি পিস ও পাঞ্জাবি। আমার কালেকশনের মধ‍্যে অন‍্যতম হলো মিরপুরি কাতান শাড়ি ও টাঙাইল জামদানি শাড়ি।এছাড়াও আমার শপে রয়েছে ব‍্যাগসহ ইত‍্যাদি পণ‍্য।

-উদ‍্যোক্তা হতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এবং সবচেয়ে কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

-জ্বী,উদ‍্যোক্তা হতে গিয়ে কিছু বাধাতো ছিলোই,যেহেতু আমি গ্রামের মেয়ে তাই গ্রামে মেয়েদের বিজনেস করা অনেকেই ভালো চোখে দেখেনা।আমার উদ‍্যোগের শুরুতেও অনেকের অনেক রকম কথা শুনতে হয়েছে,কেউ কেউ বিভিন্ন কথার প্রেক্ষিতে কিংবা ঠাট্টার ছলে বলতো, “বর কি করে,বেতন যা পায় চলেতো?”

এই ধরণের কথাতে প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও কখনো নিজের কাজ থেকে সরে যাই নি,আবার কেবল মনে হতো আমাকে নিজের লক্ষ‍্যে পৌছাতেই হবে।আর আমি সবসময় বিশ্বাস করি যখন আমরা সফল হবো তখন একসময় কটু কথা বলা মানুষগুলোও বন্ধু হতে আসে,একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স‍্যারের অনুপ্রেরণামূলক লেখাগুলো আমাকে এতটাই শক্তি যুগিয়েছে যে এখন আর লোকের কথায় পাত্তা দেই না আর মন খারাপও হয় না। যদিও শুরুতে ঠাট্টা করা সেই মানুষগুলোর কেউ কেউ এখন আমার পণ‍্যের কাস্টমার আলহামদুলিল্লাহ। উদ‍্যোগের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্টার আমার বর,সে আমাকে সবসময় উৎসাহ দেয়,আমার কাজে হেল্প করে। এমনকি কিভাবে কি করলে আমি সফল হবো এ ব‍্যাপারগুলোতে সে খুব বেশী সাহায্য করে আমাকে। ও আছে বলেই সব বাধাগুলোকে জয় করতে পারছি হাসিমুখে।

-আপনার ভবিষ‍্যত পরিকল্পনা কি?

-আমি আশা করি একদিন আমার শপ Arwa’s Collection সবার আস্থা এবং বিশ্বাস জয় করে অনেক বড় হবে।Arwa’s Collection কে ঘিরে আমার কতগুলো স্বপ্ন আছে, আমি একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের সদস‍্য,আমাদের সংগঠনের নাম ‘নোয়াখালী ব্লাড হান্টার’।আমি চাই একদিন আমার উদ‍্যোগের মাধ‍্যমেই সংগঠনের পক্ষ‍ থেকে অসহায় মানুষদের জন‍্য কিছু করতে।সেই সাথে আমাকে যারা পছন্দ করে,ভালোবাসে তাদের ভরসা হতে। আমি আরো স্বপ্ন দেখি একদিন Arwa’s Collection এর মাধ‍্যমে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে,ইনশাআল্লাহ।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।