ডিজাইন দক্ষতায় উদ্যোক্তা ‘সাফিনা আক্তার বিনা’,যাকে সবাই চিনবে এক নামে।

 ডিজাইন দক্ষতায় উদ্যোক্তা ‘সাফিনা আক্তার বিনা’,যাকে সবাই চিনবে এক নামে।

আমাদের সবার জীবনেই কঠিন সময় আসে।তা আমরা কিভাবে মোকাবিলা করি তা অন্যদের জন্য ও উদাহরণ হয়ে থাকে।প্রবল কঠিন সময়েও কিভাবে ধৈর্য্য ধরে নিজের সামর্থ্য ,বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে পরিবারের হাল ধরতে হয়।এমনই একজন হচ্ছেন সাফিনা আক্তার বিনা।যিনি স্বামীর মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েন নি,সন্তান দের মানুষ করেছেন।উদ্যোক্তা হয়ে ব্যাবসায় গড়ে তুলেছেন। আজ জানব “Bina’s Craft & Design” এবং “সুতা কথন” এর স্বত্বাধিকারী সাফিনা আক্তার বিনা এর উদ্যোগ সম্পর্কে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মিরপুরের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

আপনার সম্পর্কে জানতে চাই?

আমি সাফিনা আক্তার বিনা। আমার পড়াশোনা লক্ষ্মীপুর সরকারি গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি দেই, কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লক্ষ্মীপুর হতে এইচএসসি শেষ করি। ২০০৫ এ অনার্স করি চট্টগ্রাম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এবং মাস্টার্স ২০১৬ সালে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে শেষ করি। এছাড়া পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা কোর্স করা হয়েছে। ২০০৯সালে মতিঝিল বিসিক কর্পোরেশন থেকে পুতুলের উপর ডিপ্লোমা কোর্স করা হয়েছে। ২০১০ এ ‘ধানমন্ডি ফ্যাশন টেকনোলজি’ থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর ডিপ্লোমা কোর্স করি। পরবর্তীতে ২০১৭ তে বি জি এম আই থেকে ফ্যাশন ডিজাইনে পুনরায় ডিপ্লোমা কোর্স করা হয়।

আপনি কিভাবে উদ্যোক্তা হলেন?

আমি খুব সাংসারিক মেয়ে ছিলাম। স্বামী চাকরি করা পছন্দ করতেন না বিধায় বাসায় বসেই কিছু করার চেষ্টা করতাম। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ স্বামী যখন মারা গেলেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। আমার জন্য সে কোথাও ৫০০ টাকা ও রেখে যায়নি।তখন আমি ভেঙ্গে পরিনি। মাথায় শুধু চিন্তা ছিল দুই ছেলেকে মানুষ করতে হবে। আর সেটা করতে হলে অবশ্যই আমাকে শক্ত হাতে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এই চিন্তা থেকেই আমার পথ চলা শুরু। যেহেতু বিভিন্ন কোর্স করা ছিল তাই আমি কারও অধীনে কাজ না করে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করলাম।

আপনি কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন?

আমি যেহেতু একজন ডিজাইনার চেষ্টা করি নানান রকম জিনিস ডিজাইন করতে। মূলত -ড্রেস, বিছানা চাদর ,পর্দা ,ফ্লোর ম্যাট, টেবিল রানার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করি। এগুলোর বাহিরেও আমি নানান রকম প্রডাক্ট বানাতে পছন্দ করি। আমার প্রোডাক্ট গুলো সম্পূর্ণ আমার নিজের ডিজাইন করা। আমার উদ্যোগের সাথে জড়িত রয়েছেন আমার বড় আপু Jannatul Ferdousi ; আমি প্রোডাক্ট তৈরি করছি আর আপু ব্র্যান্ডিং করছেন।

উদ্যোক্তা সংগঠন উই এর ভূমিকা কেমন দেখেন আপনার উদ্যোগে?

উইএর প্রেসিডেন্ট Nasima Akhtar Nisha আপুএবং Kabir sakib ভাইয়াও আমাদের পণ্যের প্রশংসা করেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।গত কালার ফেস্টে আমাদের পণ্যগুলো এর প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার আপু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের পণ্য গুলো দেখে খুব প্রশংসা করেছেন এবং দায়িত্ব নিবেন বলেছেন এবং কিভাবে বাহিরে রপ্তানি করা যায় তা নিয়েও কথা বলেছেন।আলহামদুলিল্লাহ।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এবং কার সাপোর্ট পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি?

বাধার সম্মুখীন প্রতিনিয়ত হতে হয়। যেহেতু আমি একা তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষের কটু কথা শুনতে হয়। হয়তো প্রোডাক্টের জন্য আমাকে অনেক সময় অনেক জায়গায় যেতে হয়। তখন নানান জনের নানা কথা শুনতে হয়, একটা বিধবা মেয়ে বাহিরে বাহিরে ঘুরে-এইসব কথা প্রায়ই আমার কানে আসে, কিন্তু আমি কিছুই মনে করি না। কারন আমাকে অনেকটা পথ যেতে হবে। মানুষের কথা মাথায় নিলে আমি মুখ থুবরে পড়ে যাব। আমার স্বামী যখন বেঁচে ছিল তার অনেক সাপোর্ট পেয়েছি । বেশিরভাগ কাজই শিখেছি তার কাছ থেকে। তিনি ছিলেন একজন বড় মাপের ডিজাইনার। তার মৃত্যুর পর আমার দুই ছেলে আমাকে খুব সাপোর্ট দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেরা পড়ালেখার পাশাপাশি আমার সাথে কারখানায় কাজ করে। বাসার সব কাজে ও ছেলেরা আমাকে সাহায্য করে। ওদের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই উদ্যোক্তা হতে পেরেছি

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে একটা বুটিক হাউজ দেওয়ার। আমার নিজস্ব একটা ব্র্যান্ড হবে ,সবাই আমাকে এক নামেই চিনবে এই স্বপ্নটা আমি বুকে লালন করি।

Kazi Naima Ferdousi

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।