তাঁত শিল্পের প্রতি ভাল লাগা থেকেই উদ্যোক্তা ইংরেজি প্রভাষক ইশরাত চৌধুরী

 তাঁত শিল্পের প্রতি ভাল লাগা থেকেই উদ্যোক্তা ইংরেজি প্রভাষক ইশরাত চৌধুরী

বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে, একটি বিলুপ্ত শিল্প হচ্ছে তাতঁ শিল্প।অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে তাতঁ এর ব্যবহার অনেক কমে গেছে । যেখানে আগে টাঙ্গাইলের প্রত্যেক ঘরে ঘরে তাতঁ বুনা হতো সেখানে বর্তমানে তাঁতির সংখ্যা নেই বললেই চলে। যাও দুই একজন আছে তারা ন্যায্য মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে পারে না এখন। আসলে তাঁত হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্র যা দিয়ে তুলা বা তুলা হতে উৎপন্ন সুতা থেকে কাপড় বানানো যায়। তাঁত বিভিন্ন রকমের হতে পারে । খুব ছোট আকারের হাতে বহন যোগ্য তাঁত থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির স্থির তাঁত দেখা যায়। আধুনিক বস্ত্র কারখানা গুলোতে স্বয়ংক্রিয় তাঁত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তাতঁ এর কাপড় বুনা আদোও এত সহজ নয় যতটা আমরা চিন্তা করি। এমন একটি ঐত্যিহবাহী শিল্প আমাদের অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা এই শিল্পের প্রতি ভাল লাগা থেকেই কাজ করে যান এই শিল্প নিয়ে এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দেন তাত শিল্পের তৈরী শাড়ী।এমনই একজন উদ্যোক্তা হচ্ছেন ইশরাত চৌধুরী,যিনি পেশায় একজন শিক্ষক হওয়া স্বত্বেও তাঁত শিল্প নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের উদ্যোগ “labonno by ishrat”

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

শুরুতে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই?

আমি ইশরাত চৌধুরী। আমার পৈত্রিক নিবাস কুমিল্লা। কিন্তু ছেলেবেলা কাটিয়েছি পুরনো ঢাকার বাকর খানি র তেহারি খেয়ে । পরিবেশটাই ছিল তেমন।বাবার সরকারি বাসা ,পুরনো জমিদার বাড়ী।রায় সাহেব বাজারের স্বর্ন কুটিরে কাটে শৈশব। কৈশোর ,তারুণ্যে জীবনের অনেক টা সময় পড়েছি মিশনারী স্কুল সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স স্কুলে।স্কুল শেষে ভিকারুননিসা নুন কলেজ থেকে এইচ এস সি এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে মাস্টার্স । পড়াশোনার প্রতি দারুন ঝোঁক ছিল বলেই MBA করে ফেললাম সুযোগে HRM এ।। শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলাম সম্পূর্ণ শখের বসে ২০০১ এ ।যেটা এখন পর্যন্ত চলছে।

তাঁত শিল্পের প্রতি ভাল লাগা কিভাবে?

বাবার চাকুরিসুত্রে ঘুরেছি নানা জেলায় ।মজার ব্যাপার হলো সে সব জেলা গুলো তাঁত সমৃদ্ধ জেলা ছিল। টাঙ্গাইল ,রাজশাহী ,পাবনা,সিরাজগঞ্জ,নরসিংদী আর নিজ জেলা কুমিল্লা তো রয়েছেই । টাঙ্গাইল জেলার তাঁতিদের জীবনমান সেই ছোট বেলাতেই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে ।একেকটা তাঁত ঘরে যেতাম আর দেখতাম তাঁত শিল্পীদের পরিশ্রম। কত কত শাড়ি, তাঁতের খট খট আওয়াজ তখন থেকেই মনে গেঁথে গেছিলো।খুব মনে পড়ে আমাকে তখন এক চাচা জিজ্ঞেস করেছিলেন বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও ?ছোট অবুঝ মন আমার কিছু না ভেবেই বলে দিয়েছিল তাঁতী হব।সেটাই মন থেকে কখনো সরাতে পারিনি।তাই তাঁতী না হলেও আমি তাঁত নিয়েই কাজ করছি এটাই আনন্দের ।

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা কিভাবে?

উদ্যোক্তা হবার গল্পটা একটু অন্য রকম।বছর দেড়েক আগের কথা ।হঠাৎ এক অনুষ্ঠানে শাড়ি লাগবে ।আমরা ৩৫ জনের গ্রুপ।।লক ডাউন।মার্কেট ও বন্ধ ।সবাই পরামর্শ দিল অন লাইন। খুজা খুঁজি শুরু করলাম বিশ্বস্ত মনে হলনা তেমন।হঠাৎ মাথায় এক বুদ্ধি আসলো।টাঙ্গাইলের এক আপু কে আমি চিনি ।ওর মাধ্যমেই এক তাঁতির সাথে কথা কিছু শাড়ি দেখে একেবারে ৫০ টা শাড়ির অর্ডার করে ফেললাম।সেই শুরু। এর পরই উই গ্রুপে যোগ দেয়া।উদ্যোক্তা হবার বাসনাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ফলো করতে লাগলাম উই আর ডি এস বি ।Digital skills for Bangladesh গ্ৰুপে সেখানে মেন্টর হিসেবে পেয়েছি শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারকে।তার প্রত্যেকটা পোস্ট আমার জন্য অনুপ্রেরণা ও গাইড লাইন।এখান থেকে শিখলাম পেইজ খুলে কি ভাবে অন লাইন বিজনেস করবো।বাস শুরু করলাম ।আল্লাহর রহমতে চলছে ।পুরো প্রেরণার মূল আঁধার টা আমি আসলে রাজিব স্যার এর পোস্ট গুলো থেকেই পেতাম।

কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন?

এখন পর্যন্ত তাঁতের শাড়ী নিয়েই আছি ।নানা ভাবে কাস্টোমাইজ করছি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ।ইচ্ছে রয়েছে উন্নত মানের সালওয়ার কামিজ কুর্তি নিয়ে কাজ করবো।তবে যেটাই করিনা কেন তাঁতের শাড়ী থাকবে ফার্স্ট প্রায়োরিটি।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কি ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট কাদের থেকে পেয়েছেন?

উদ্যোক্তা হবার প্রথম বাধাটা আসলে আমার জন্য ছিল হাতের কাছে সোর্সিং নিয়ে ।আমার নিজের যেহেতু তাঁত নিয়ে পড়াশোনা ছিল এবং কিছু কিছু সোর্সিং আমি আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম সেটা আমি কাটিয়ে উঠেছিলাম খুব তাড়াতাড়িই। আর সাপোর্ট বলতে পুরো পরিবার আমার সাথে আছে।এ জন্য আমি খুব সাহস পাই। মা ভাই বোন স্বামী সন্তান সবাই দারুন উৎসাহ দেয় ।ধীরে ধীরে আশেপাশের পরিচিত জনরাও এগিয়ে আসছে যারা একসময় আসলে ভালো ভাবে বিষয়টা নেয়নি যে আমি একজন শিক্ষক হয়ে কাপড় নিয়ে কাজ করবো আমার একাগ্রতা আগ্রহ এগুলোকে পিছনে ফেলতে সাহায্য করেছে ।

উদ্যোগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অনেক কিছু। তাঁত শিল্পের সাথে আমার নামটা জুড়ে থাকবে।এটার জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করবো।তাঁতের শাড়ি শুধু একটি শ্রেণী নয় সকল শ্রেণীর কাছে সমান ভাবে গ্রহণীয় আদরণীয় হবে সে চেষ্টা থাকবে ।সব চেয়ে বড় যে বিষয়টা আমাদের দেশের তাঁতিদের জীবন মান উন্নয়নে আমি ভূমিকা রাখতে চাই ।শুধু মাত্র তাঁত বস্ত্র ব্যাবহার বাড়ানো র বিদেশী পণ্য ব্যবহার কমিয়ে এটা অনেকাংশে সম্ভব।সচেতনতা তৈরি করতে হবে দেশ প্রেম জাগ্রত করতে হবে।আরেকটি বিষয়ের প্রতি যদি আমরা সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসি, সক্ষমতার দিকে নজর দেয়া ।পেটে ভাত না থাকলে তারা আপনার জন্য কি কাজ করবে। তাঁতিদের আধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত করা , ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা করা, প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে তাদের দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করা,সুতা ,রং এর দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা, বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখা। এগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাই আসলে।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।