দক্ষতা যখন উদ্যোগে পরিনত হয়-পাগড়ী বাধাই করে উদ্যোক্তা সংগীতা মজুমদার

 দক্ষতা যখন উদ্যোগে পরিনত হয়-পাগড়ী বাধাই করে উদ্যোক্তা সংগীতা মজুমদার

আমরা অনেকেই নিজেদের কোনো গুন নেই মনে করি কিংবা কোনো কিছুতে দক্ষতা নেই তাও ভেবে থাকি।কিন্তু এটা ভুল, আমরা প্রত্যেকে এমন কোনো না কোনো কাজে দক্ষ যা দিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব এবং আয় করাও সম্ভব।যে কাজে আপনি পারদর্শী সে কাজই আপনি যখন আপনার পেশা হিসেবে বেচে নিবেন এতে সফলতার সম্ভাবনা কয়েকগুন বেশি।ব্যাবসায় পরিনত করলে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়া যায়।এমন অনেক কাজ ও আছে যা আমরা দেখে বুঝতে পারিনা এটা কেও কাজে পরিনত করে উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব।আজ জানব এমন একজন উদ্যোক্তা এর ব্যাপারে, যিনি কিনা কোনো কাজ চোখের দেখা দেখেই শিখে নিতে পারেন তার হাতে কলমে শিখতে হয়নি।তিনি নিজের দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে আজ উদ্যোক্তা। কথা বলছি ভোলা জেলার সংগীতা মজুমদার কে নিয়ে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

আপনার সম্পর্কে ছোট করে জানতে চাইব।

আমি সংগীতা মজুমদার। বাবা – সুনীল চন্দ্র শীল।মাতা- বিজলী রানী। বাবা মায়ের ৩ কন্যা সন্তানের মধ্যে আমি সবার বড়। বাবা ব্যবসা করেন। আমার গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলা। এস এস সি পাশের পরেই বিয়ে হয়ে যায়। ১ ছেলে কে নিয়ে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি নিজের ইচ্ছায়। মাঝে মাঝে অনেক টা সময় গ্যাপ গেলেও ডিগ্রিটা কমপ্লিট করি। আর ডিগ্রি পাশ করার মাঝে শুরু হয় আমার নতুন অধ্যায়

আপনি কি ভাবে উদ্যােক্তা হলেন?

আমি যে একজন উদ্যােক্তা হবো তা কখনো ভাবিনি। ছোটবেলা থেকে যে কাজ আমি চোখের সামনে দেখেছি সেই কাজই আমি আয়ত্ত করেছি। আর বিশেষ করে হাতের কাজের নেশা ছিলো অনেক বেশি। আমাকে কখনো কোন কাজ হাতে কলমে শিখতে হয়নি। কারন আমি একবার যে কাজ দেখছি তা সাথে সাথে শিখে ফেলেছি। আমি ২০১১ সালে একটা ইন্ডিয়ান ব্র‍্যান্ডে যোগদান করি এবং সেখানে দীর্ঘ ৯ বছর জব করি আর সেখান থেকে আমার উদ্যােক্তা হওয়ার নেশা চেপে বসে মাথায়।।

আপনি কোন কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন?

আমি আসলে যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি তা শুনলে সবাই অবাক হয়ে যায়। কারন আমার মনে হয় আমি ছাড়া কোনো মেয়ে এই কাজটি করে না। আর সেটা হলো “”পাগড়ি বাধাই””। এবং পাগড়ি বাধা কাজটি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে করে আসছি। এখন শুনলে সবাই আরো অবাক হয় পাগড়ি বাধাই টা কি? পাগড়ি বাধাই টা হলো আমি বিয়ের দিন বরের বাসায় গিয়ে হাতে বাধাই পাগড়ি বাধাই করে থাকি এবং রেডিমেড পাগড়ি ও বাঁধাই করে থাকি। হাতে বাধাই পাগড়ি ও কুরুশ-কাঁটার কাজ আমার সিগনেচার পন্য।

আপনার ব্যাবসায় এর নাম?

আমার পেইজের নাম”” পাগড়ি বাধাই“” আর আমার অন্য পেইজের নাম “নয়া বিবি” নয়া বিবিতে পণ্যগুলো হচ্ছে শাড়ী -থ্রি পিচ কুরুশকাটা নিয়ে কাজ করা।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখিন হয়েছেন কি না এবং সবচেয়ে বেশি কার সাপোর্ট পেয়েছেন ?

আসলে কোনো কাজ শুরু করলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আর সব বাধা অতিক্রম করে যাওয়াই হলো একজন উদ্যােক্তার মূল লক্ষ্য। আর লক্ষ্যচ্যুত হলে উদ্যােক্তা ব্যর্থ।

যাই হোক কাজ করতে গিয়ে প্রথমে কখনো পরিবারের সাপোর্ট পাইনি। আর আমার এই পাগড়ির কাজের কথা আমার বাসার কেউ জানত না। কারন আমি জবের পাশাপাশি নিজের উদ্যােগ নিয়ে কাজ করতাম। তবে আমাকে আমার কাজের জন্য কিছু অফিস কলিগ আছে তারা অনেক সাহায্য করেছে। তারা আমাকে সেই সাহায্য না করলে আমি হয়তো আমার উদ্যােগ নিয়ে এতোদূর আসতে পারতাম না।

আর যার কথা না বললে নয় সে হলো আমার কলিগ, ক্লাস মেট, একজন ভালো বন্ধু রাজীব আহমেদ। আমাকে সব সময় সু পরামর্শ এবং পাগড়ি বাধাই কাজের জন্য সব সময় সাপোর্ট করে যাচ্ছে। আমি যেখানে যেতে পারি নাই। আমার হয়ে রাজীব আহমেদ সেই কাজ টা করেছে। আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই রাজীব কে।

ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কি?

ভবিষ্যতে পরিকল্পনা হলো আমার নিজস্ব একটা দোকান থাকবে যাকে আমি ব্র‍্যান্ডে পরিণত করবো এবং সেখানে শুধু পাগড়ি না। বিয়ের সব কিছু থাকবে ডালা কুলা, গায়ে হলুদের সব তত্ত্ব, পাগড়ি, রেডিমেড পাগড়ি, ব্রোজ, ইত্যাদি সব থাকবে। সবাই যেনো সব কিছু এক জায়গায় থেকে কিনে নিতে পারে।

এবং তার সাথে কুরুশকাটার কাজ তো আছে। যা দেশ থেকে বিদেশের মাটিতেও যেনো পৌঁছাতে পারি । তাছাড়া হাতের কাজের শাড়ী থ্রি পিচ, নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।