বাবা-মায়ের স্বপ্ন-পূরনের জন্য উদ্যোক্তা পথ বেছে নিয়েছেন রিমা কর্মকার

 বাবা-মায়ের স্বপ্ন-পূরনের জন্য উদ্যোক্তা পথ বেছে নিয়েছেন রিমা কর্মকার

কিছু মানুষ আছে যারা শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাস আর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অসাধ্য কাজটিও করে ফেলেন খুব সহজে। সেই মানুষগুলো কারো হুকুমের গোলাম বা চাকুরীজীবি নন। এরা সাহসী উদ্যোক্তা! যারা শূন্য কে শূন্য দেখে না। যারা শূন্যকে রুপান্তরিত করে অসংখ্য সংখ্যায়। যারা নারী বলে সমাজে নিজেকে সীমায় আবদ্ধ রাখেনা।যারা যোদ্ধা।লড়াই করে নিজেদের প্রতিকূলতার সাথে।তেমনই একজন হচ্ছেন কুমিল্লার রিমা কর্মকার। কুমিল্লা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত।এছাড়াও এই এলাকায় বাংলার বহু কীর্তিমান ব্যক্তির জন্ম হয়েছে।এখানকার কৃতী সন্তানের মধ্যে রয়েছেন বীর প্রতীক প্রাপ্ত আবদুল গনি,মনসুর আলী,কবি বুদ্ধদেব বসু,রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ সহ আরো অনেকে।

রিমা কুমিল্লা শহরের ছাতিপট্টি এলাকার বাসিন্দা।পরিবারে বাবা- মা আর এক ভাই আছেন। রিমা শিক্ষা ক্ষেত্রেও উজ্জ্বল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ প্রাপ্ত।কুমিল্লা বোর্ড থেকে সেরাদের কাতারে আর বৃত্তিপ্রাপ্ত। বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। মায়ের স্বপ্ন পূরন,মায়ের সহযোগিতা ও নিজ পায়ে দাঁড়ানোর জন্যই রিমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু।গড়ে তুলেছেন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান “অনলাইন হেশেল”।তার এই যাত্রা নিয়েই কথা হয়েছিল রেড লাইভের ক্যাম্পাস এক্সিকিউটিভ আরাফাত রহমান এর সাথে।

কিভাবে আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পথ যাত্রা শুরু?

মায়ের সবসময় ইচ্ছা ছিল নিজের মনে মতো কিছু করার। সবসময় আফসোস করতো। তারপর একদিন আমার বন্ধু কথায় কথায় বললো, “আন্টি তোমার তো রান্না খুব ভালো। তুমি এটা নিয়েই তো কিছু করতে পারতা।” তারপর আমারও মনে হলো আসলেই তো এটা নিয়ে কাজ করি। তবে পুঁজি কম,দোকান দেয়া সম্ভব নাহ। তাই অনলাইন ই ভরসা। তাহলে ঘরের কাজের পাশাপাশি কিছু করতে পারব। তারপর একটা পেইজ খুলি। কিছু ছবি তুলে পেইজে আপলোড করি। ৩/৪দিন পর এক আপু অর্ডার করেন।ওনার আচার খেয়ে এতো ভালো লাগে, উনি কুমিল্লার একটা ফুড গ্রুপে রিভিউ পোস্ট করেন। ওনার পোস্ট দেখে অনেক রেসপন্স আসে। মা খাওয়ার টাইম ও পেত নাহ। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মা আর আমি দুজনই এখন সাবলম্বী, সংসারে কনট্রিবিউট করতে পারছি। এখন আরো নতুন অনেক আইটেম যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো চলছে। বলে রাখি, মা মাত্র ১৬০০টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল।

আপনি কি কি ফুড আইটেম নিয়ে কাজ করেন?

আচার, সন্দেশ,নাড়ু, মোয়া, মিষ্টি, নারিকেল কুচা ইত্যাদি। ব্যাস্ত শহরে মানুষের এখন আর আগের মত এসব করে খাওয়ার সময় হয় না।দোকানের খাবারের গুনগুত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।ঘরে বানানো খাবারের চাহিদা ও বেশি, মানুষ পছন্দ ও করে।তো আমাদের সবসময় কোয়ালিটি এর ব্যাপার টা মাথায় থাকে।ব্যাবসার থেকে মানুষ খেয়ে যেন খুশি হয়, তৃপ্তি পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করি।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কোন বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এবং সবচেয়ে কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

অনেক পেয়েছি। একটা মেয়ে উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকে, তারপর আস্তে আস্তে পাড়া প্রতিবেশীর নানা কটুক্তি,তারপর পুঁজির সমস্যা। ডেলিভারি করতে সমস্যা হয়। কারণ হোম ডেলিভারি করতে গেলে অনেক হ্যারেস ও হতে হয়। অনলাইন হ্যারেসমেন্ট তো আছেই। আর সাপোর্টার কেউই ছিল নাহ। আমি মাকে সাপোর্ট দিতাম।তবে এখন সবাই এটাকে খুব নরমাল নিচ্ছে এবং সাপোর্ট ও দিচ্ছে।অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে আমার এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে আমার ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিও দেয়নি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।

আপনার উদ্যোগটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

প্রাতিষ্ঠানিক একটা জায়গা তৈরি করা। অনলাইন হেঁশেল কে ব্রান্ড রূপে দেখা। পুরো দেশের সব জায়গায় স্বল্প খরচে যেন সবাইকে বেস্ট সার্ভিস দিতে পারি।সবাই যেন ঘরে বানানো আচার, সন্দেশ খেয়ে তৃপ্তি পায়।বাংলাদেশের সফল নারী উদ্যোক্তাদের একজন হওয়ার স্বপ্ন দেখি নিজের এই ব্যাবসা দিয়েই।নিজের মানুষ দের জন্য যেন কিছু করতে পারি।বাবা মা তাদের জন্য যেন কিছু করতে পারি। একজন উদ্যোক্তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা উচিৎ, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নয়। কিন্তু এই মূহুর্তে আমাদের দেশে নারী তথা নারী উদ্যোক্তা ও নারী পেশাজীবিরা পুরষদের মতো নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ পাননা। এটা সমাজের সমস্যা হোক, দেশের সমস্যা হোক- এটা একটা সমস্যা। নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবেলা করতে হয়না।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।