সরকার শিক্ষিতদের উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করছে, যা খুব ইতিবাচক- উদ্যোক্তা আবিদ রহমান

 সরকার শিক্ষিতদের উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করছে, যা খুব ইতিবাচক- উদ্যোক্তা আবিদ রহমান

আমাদের সবার মাঝেই একটা প্রবনতা আছে আমরা তাদের কথা গুলোই গুরুত্ব দেই যারা সফল।টাকা দিয়ে মোটিভেশন নিতে যাই।আমাদের কাছে সফলতা বলতে সরকারি চাকরি, বিসিএস কিংবা বড় ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালিস্ট।কিন্তু কেউই একদিনে জেফ বেজস কিংবা মুকেশ আমবানি কিংবা জ্যাক মা হয়ে যায়না।সবারই একটা শুরু থাকে।ওই শুরুতে আগ্র‍হ আর সকল প্রতিকূলতা আর হীনমন্যতা না মাথায় রেখে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকতে হয়।জেফ বেজস কিংবা জ্যাক মা শুরুতে সরকারি চাকরির পিছনে ছুটলে আজ তারা বিশ্ব কাতারে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় থাকতেন না।কিন্তু আমাদের সবার চিন্তা এখন বিসিএস আর সরকারি চাকরিতে। এসবে আমাদের দেশের তরুনরা ছুটছে। কিন্তু আজ কথা বলছি এমন একজন তরুন কে নিয়ে যার চিন্তা ভাবনা প্রচলিত ধারা হতে ব্যাতিক্রম। বিসিএস কিংবা সরকারি চাকরির পিছনে না ছুটে তিনি নিজেই কিছু করার চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন “Outfit Bangladesh ” কথা বলছি ” Outfit Bangladesh “ এর CEO এবং Owner আবিদ রহমান এর সাথে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রেড লাইভ এসিস্ট্যান্ট অফ কমিউনিকেশন অফিসার সাদিয়া ইসলাম মীম

আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন?

-আমি আবিদ রহমান। জন্ম রংপুর জেলায়। আমার ছোটবেলা কাটে রংপুর শহরে। স্কুল, কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে৷ অনার্স, মাস্টার্স কমপ্লিট করি সেখান থেকে। বর্তমানে আমি Outfit Bangladesh এর Owner এবং CEO পদে আছি।

হিসেবে আপনার পথচলা কবে থেকে শুরু?

-উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে।

আপনার এই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্পটা জানতে চাই।

-আমি বরাবরই প্রচলিত ধারা ব্যাতিক্রমে চলতে পছন্দ করি। পড়াশোনা শেষে বন্ধুরা বিসিএস, ব্যাংক জবের প্রিপারেশন শুরু করে। কিন্তু আমার তা ভালো লাগে না। তাই রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট বা ফ্রিল্যান্স রিসার্চ রাইটার এর কাজ শুরু করি। এর মাঝে বিশ্বে নেমে আসে করোনা দুর্যোগ। রিসার্চ এর কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে অন্য প্রজেক্ট করতে গিয়ে অনেক ঋণে জর্জরিত হই। এরপর আমি বর্তমান উদ্যোগটি নেই।

. আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা কে দিয়েছেন?

-আমাকে আমার এই উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে আমার স্ত্রী। সে সবসময় আমার কাজকে সাপোর্ট করে গিয়েছে। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও আমাকে সাহস যুগিয়েছে।

আপনি কি কি সেবা অথবা পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

– আমি বিভিন্ন রকম গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে কাজ করছি। ছেলেদের গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, জগার্স, ট্রাউজার্স, টি-শার্ট, পোলো টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট, আন্ডার গার্মেন্টস ও লেডিস কুর্তি নিয়ে কাজ করছি।

একজন উদ্যোক্তার কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয় এবং তা কি করে সমাধান করা যায় বলে আপনি মনে করেন?

– একজন উদ্যোক্তার চলার পথে সবচেয়ে বড় বাধা তার আত্নীয়-স্বজন ও সমাজ। আমাদের সমাজটা এমন হয়ে গেছে যে কেউ সরকারী চাকরি না করলে তার কোন মূল্য নেই। সকল ক্ষেত্রে তাকে ছোট করা হয়। উদ্যোক্তাকে এইরকম পরিস্থিতি ইগনোর করতে হবে যে কোন ভাবে। নাহলে সে হীনমন্যতায় ভুগবে এবং সফল হবে না। উদ্যোক্তার জন্য এরপরের বড় বাধা মূলধন স্বল্পতা। শখের বশে বা বিপদে পড়েই মানুষ উদ্যোক্তা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার মূলধন কম থাকে৷ এই অল্প ক্যাপিটালে মানিয়ে সেভাবে করেই উদ্যোগের প্ল্যান করতে হবে। এটি সমাধানের আর একটি উপায় ইনভেস্টর নেওয়া। তবে এতে লভ্যাংশ ভাগ হয়ে যায়। আর প্রাথমিক স্টেজে লাভ খুব কম থাকে। সে সময় লভ্যাংশ ভাগ হয়ে গেলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ে। উদ্যোক্তাদের হতাশ হওয়া যাবে না। উদ্যোক্তার আর একটি বড় সমস্যা ট্রেনিং স্বল্পতা। একটা বিজনেস রান করতে কিছু বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয়, যা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে লাভ করা যায়। উদ্যোক্তাদের জন্য এমন কিছু বেসিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। একজন উদ্যোক্তাকে প্রচুর পরিশ্রমী হতে হবে। একজন চাকুরীজীবি ৮ ঘন্টা কজ করলে একজন উদ্যোক্তাকে দিনে ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়। একজন উদ্যোক্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ইনিশিয়াল স্টেজটা পার করা। ইনিশিয়াল স্টেজে কাজ অনেক করতে হয়, তবে ফলাফল কম আসে। যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এই স্টেজটা কেউ সফলভাবে পার হয়ে গেলে তার উদ্যোগ সফলতার পথে এগিয়ে যায়।

আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একজন উদ্যোক্তার জন্য তার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ?

– বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একজন উদ্যোক্তার চলার পথ খুব কঠিন। যতদিন না কেউ এস্টাবলিশ হচ্ছে তার বিজনেসে ততদিন সে কোনো স্বীকৃতি পায়না। উল্টো সবাই তার চলার পথে সমস্যার সৃষ্টি করতে থাকে৷ সরকার শিক্ষিতদের উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করছে, যা খুব ইতিবাচক। এর সাথে কিছু টেকনিকাল সাপোর্ট দরকার। এগুলো পেলে উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করা সহজ হবে। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে দেশের এই বিশাল বেকার যুবক সমাজ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।